ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে তিন ফিলিস্তিনি নিহত

আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে ইহুদিবাদী সেনারা। ২১ জুলাই ২০১৭ শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাদের বাধায় যারা মসজিদে প্রবেশ করতে পারেননি তারা রাজপথেই নামাজ আদায় করেছেন। পথগুলো যেন রূপান্তরিত হয়েছে প্রতিরোধের জায়নামাজে। এক পর্যায়ে মসজিদে প্রবেশ করতে না পারা বিক্ষুব্ধ মুসল্লিদের ওপর গুলি ছোঁড়ে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী। এতে পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রতিরোধের জমায়েতে অংশ নেওয়া অন্তত ২০০ মুসল্লি।

পুরো জেরুজালেম শহরজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ বসতি স্থাপনকারী শতাধিক ইহুদি। ইসরায়েলি পুলিশের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পুরো  এলাকায় অন্তত তিন হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর তাণ্ডবে অন্তত ১৪০ জন আহত হয়েছেন।

শুক্রবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ফিলিস্তিনিরা আল আকসা মসজিদ থেকে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার জোর দাবি জানান। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলিবর্ষণ শুরু হলে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এক ভিডিওতে দেখা গেছে, নামাজরত এক মুসল্লিকে লাথি মারছে ইসরায়েলি পুলিশ।

পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরা’র সাংবাদিক ইমরান খান বলেন, এটা পরিষ্কার যে, ইসরায়েলি বাহিনী জেরুজালেম শহরের প্রবেশমুখে ফিলিস্তিনিদের দেখতে চায় না। তাদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ মুসল্লিরা।

আল আকসা মসজিদ ঘিরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মুখে সেনা সদস্যদের ছুটি বাতিল করেছে তেল আবিব। সেনাবাহিনীর প্রতিটি ইউনিটকে যে কোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

৪০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি মুতাহির আবু ইব্রাহিম। তিনি টেলিগ্রাফকে বলেন, মুসলিমদের জন্য এটা খুবই অপমানজনক। এটা মুসলিমদের পবিত্র স্থান। এটি দখলে ইসরায়েলের কোনও অধিকার নেই।’ তখনই তার চারপাশের মুসলিমরা আওয়াজ তুলতে থাকেন। সবাই বলেন, ‘আমরা আমাদের রক্ত দিয়ে হলেও আল-আকসাকে রক্ষা করবো। জেরুজালেমে গিয়ে আমরা শহীদ হবো।’

পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার তার মন্ত্রিসভার সঙ্গে এক বৈঠক করেছে। সরকার পুলিশকেই তাদের ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশের মুখপাত্র সুপারিটেন্ডেন্ট মিকি রোজেনফিল্ড বলেন, ‘পুলিশ ও সীমান্ত পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত তারা। আল আকসা মসজিদ ৫০ বছরের উর্ধ্বে সবার জন্যেই খোলা।’

১৯৬৭ সালে যখন ইসরায়েল এই এলাকায় প্রবেশাধিকার পায় তখন শুধু মুসলিমরাই আল-আকসায় নামাজ পড়তে পারতো। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় প্রার্থনার সুযোগ পেত ইহুদিরা। মেনে চলতে হতো অনেক নিয়ম। বিগত ৫০ বছরে এই চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। আর ইসরায়েল এখন আল-আকসার দখল নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

২০ জুলাই ২০১৭ বৃহস্পতিবার আল আকসা মসজিদে প্রবেশে ইসরায়েলি বিধিনিষেধ নিয়ে কথা বলেন ইসরায়েলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিলাদ এরদান। ইসরায়েলি আর্মি রেডিও’কে তিনি বলেন, আল  আকসায় প্রবেশে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে; গত এক সপ্তাহে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোনও প্রতিবাদ এমনকি কোনও নিন্দাও আসেনি। সূত্র: আল জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর।

/এমপি/