পাকিস্তানে ভাইয়ের অপরাধে বোনকে ধর্ষণ: প্রধান বিচারপতির স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশ

মুলতানের পঞ্চায়েতে ভাইয়ের অপরাধের সাজা হিসেবে তার কিশোরী বোনকে ধর্ষণের আদেশ দেওয়ার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নোটিশ জারি করেছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিঞা সাকিব নিসার। এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এদিকে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুলতান সিটি পুলিশ কর্মকর্তা হাসান ইউনাস।

ধর্ষণের প্রতীকী ছবি
আল্লাহ বক্স নামের স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “এ মাসের শুরুর দিকে পঞ্চায়েতে (গ্রাম্য দরবার) একজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তার ১২ বছরের বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। আর তার সাজা হিসেবে সন্দেহভাজন ধর্ষকের বোনকে ধর্ষণ করতে ওই ব্যক্তিকে আদেশ দেয় পঞ্চায়েত।”

সাজা ঘোষণার পর ১৬ বছরের মেয়েটিকে জোর করে গ্রাম্য দরবারের সামনে নিয়ে আসা হয়। এরপর বাবা-মার উপস্থিতিতেই সবার সামনে তাকে ধর্ষণ করা হয়। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, পরে মেয়ে দুইটির মায়েরা স্থানীয় থানায় অভিযোগ করেন। শারীরিক পরীক্ষায় দুই মেয়েই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।  

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ জানায়, বুধবার (২৬ জুলাই) বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ধর্ষণের খবরটি প্রকাশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) এ ব্যাপারে স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে নোটিশ জারি করেন প্রধান বিচারপতি।

স্থানীয় জিরগা বা গ্রাম্য দরবারে ধর্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বলে খবর প্রকাশ হলেও সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে পঞ্চায়েতে আসলে দুই পরিবারের সদস্যরা মিলেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার ধর্ষণের শিকার ওই দুই নারীর সঙ্গে কথা বলেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এ ঘটনায় তদন্তের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদেরকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রত্যন্ত গ্রামের নানা সমস্যা সমাধানে বয়স্কদের নিয়ে গঠিত পঞ্চায়েত ভূমিকা রেখে থাকে। যদিও এসব পঞ্চায়েত অবৈধ বলে বিবেচিত হয়। তাছাড়া অনার কিলিং ও ধর্ষণের বদলে ধর্ষণের সাজা ঘোষণারি কারণে আগে থেকেই সমালোচিত এ গ্রাম্য দরবার।

২০০২ সালে এরকম একটি পঞ্চায়েতে ২৮ বছর বয়সী মুখতার মাইকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করার আদেশ দিয়েছিল। মুখতার মাই-এর ১২ বছর বয়সী ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, একজন বয়স্ক নারীর সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। জিরগার সাজা হিসেবে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বিরল সাহসিকতা দেখিয়ে ধর্ষণকারীদের বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা করেন। পরে অবশ্য একজনের যাবজ্জীবন সাজা হলেও বাকি অভিযুক্তদের খালাস দেয় পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্ট।

মুখতার মাই এখন বিশ্বে একজন সোচ্চার নারী অধিকার কর্মী হিসাবে পরিচিত মুখ। গ্রামে মেয়েদের জন্য তিনি স্কুল খুলেছেন এবং একটি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করেছেন।

/এফইউ/