ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিভেদের কথা স্বীকার করলেন টিলারসন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর সঙ্গে মতবিভেদের ব্যাপারে প্রথমবারের মতো সরাসরি স্বীকার করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইরান প্রশ্নে তাদের মতবিরোধ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তেহরান এবং বিশ্বের ৬ পরাশক্তির মধ্যে ২০১৬ সালে সম্পাদিত এই চুক্তিটি বাতিলের পক্ষে ট্রাম্পের অবস্থান। বিপরীতে টিলারসন বিকল্প পথে সংকটের সমাধান চান। হোয়াইট হাউস থেকে এখনও টিলারসনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্প-টিলারসন

২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে ইরান। ওবামা যুগে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও ইউরোপের তিন শক্তিধর দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স আর জার্মানির সঙ্গে তেহরানের ওই পরমাণু সমঝোতা কার্যকর হয়। চুক্তির আওতায় ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি কমিয়ে আনতে রাজি হয়। বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ট্রাম্প এই চুক্তি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে টিলারসন সাংবাদিকদের তেহরান-ছয় পরাশক্তির পরমাণু সমঝোতা প্রসঙ্গে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও আমি এই বিষয়টি একরকম করে দেখি না। এই চুক্তি নিয়ে কি করা যায় তা খতিয়ে দেখতে আমরা আলোচনা করছি।’

ওই পরমাণু চুক্তির রূপরেখা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে করে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সক্ষম না হয়। চুক্তি অনুসারে, ইরান নিজের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে আনতে রাজি হয়েছে, যা পরমাণু বোমা বানানোর কাজে লাগানো যেতে পারে।  ইরান আগামী ১০ বছরে বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট উপাদান মজুত করতে না পারে, তাই নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা ছিল ওই চুক্তিতে। ইরান এ সমঝোতা মেনে চলছে কিনা মার্কিন কংগ্রেসকে তা প্রতি ৯০ দিন পর জানাতে হয়। তবে মার্কিন সরকার সন্তুষ্ট না হলেই কংগ্রেস ইরানের বিরুদ্ধে কিছু নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করতে পারে।

বুধবার টিলারসন বলেন, ‘ওয়াশিংটন চাইলেই ইরানকে দায়ী করে যে কোনও সময় ক্ষমতাবলে এই চুক্তি বাতিল করতে পারে।’ তবে টিলারসন এই চুক্তির আওতায় আরও কাজ করতে চান। তিনি বলেন,‘আমাদের কাছে অনেক বিকল্প আছে। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আমরা কিভাবে লাভবান হতে পারি সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।’   

বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, ইরানের সঙ্গে ওই চুক্তিতে আদতে খুব লাভ হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের। ইরাক ও সিরিয়াতে সেনা সমর্থন দেয়নি ইরান এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাতেও তাদের কাছ থেকে আশানুরুপ সমর্থন পায়নি যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ওহিও’র ইয়ংসটাউনে বক্তৃতা দেয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “পরমাণু সমঝোতা যেভাবে মেনে চলার কথা সেভাবে যদি ইরান তা মান্য না করে তাহলে দেশটিকে অনেক বড় বড় সমস্যায় পড়তে হবে। আমি আপনাদেরকে যা বলেছি আপনারা তা বিশ্বাস করতে পারেন।” একই দিনে ওয়াল স্ট্র্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, আগামী তিন মাস পর যখন আবার ইরানের পরমাণু সমঝোতা মেনে চলার ওপর সার্টিফিকেট দেওয়া হবে তখন পর্যন্ত যদি ইরান এ সমঝোতো মেনে চলতে পারে, তাতে তিনি বিস্মিত হবেন। ইরানকে সামনের অক্টোবরের মধ্যে এই চুক্তির অযোগ্য ঘোষণার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।

ইউরোপীয় কর্মকর্তারাও ইরানের উপর পূর্বে জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা নতুন করে আরোপ করত চায়। তবে জুলাইয়ে ইরানের উপর আরোপিত নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও পরমাণু চুক্তি বিরোধী বলে দাবি ইরানের। টিলারসন মনে করেন ইরানকে চাপ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সুযোগ এখন খুবই সীমিত।  এজন্য বাকি দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি।

/এমএইচ/বিএ/