মেক্সিকোতে ভিন্নমত দমন: ইসরায়েলি সফটওয়্যার দিয়ে অবৈধ নজরদারির অভিযোগ

বিরোধী মতের ওপর দমনপীড়নে মেক্সিকো সরকার গণনজরদারি চালাচ্ছে, এমন অভিযোগ বহুদিন আগের। সবশেষ দু’জন মানবাধিকার আইনজীবীকে নজরদারির আওতায় নেওয়ার পর সেই অভিযোগ আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। পেগাসাস স্পাইওয়্যার নামের এক ইসরায়েলি সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওই নজরদারি চলছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওই সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দাবি গণনজরদারি না করার শর্তেই তারা মেক্সিকোতে এটি বিক্রি করেছেন। এদিকে  গণনজরদারির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে মেক্সিকো সরকার।

নিহত ফটোসাংবাদিক রুবেন এসপিনোসা
কারলা মিচিল সালাস এবং ডেভিড পেনা নামের ওই দুই আইনজীবী বেশকিছু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছেন যা রাষ্ট্রীয় মদদে সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, একজন সক্রিয় সরকারবিরোধী অ্যাকটিভিস্ট এবং ফটো সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডও রয়েছে তাদের তদন্তের আওতায়। 

ইন্টারনেটে তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংগঠন সিটিজেন ল্যাব জানায়, ২০১৫ সালে আইনজীবী কারলা এবং পেনা অ্যাক্টিভিস্ট নাদিয়া ভেরা, সাংবাদিক রুবেন এসপিনোসা এবং আরও তিন নারীকে হত্যার ঘটনার তদন্তে নিয়োজিত ছিলেন। তদন্তের স্বার্থে রাজধানী মেক্সিকো সিটি অ্যাপার্টমেন্টে প্রসিকিউটরদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তারা। এরপর তাদের নজরদারির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে হয়। তাদের সেলফোনগুলোতে এমন কিছু মেসেজ পাঠানো হয়েছিল যেন মোবাইলগুলো স্পাইওয়্যার দিয়ে আক্রান্ত হয়। দুই আইনজীবীর একজন দাবি করেছেন, তার ফোন স্পাইওয়্যারে আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে করছেন। ওই একই স্পাইওয়্যার অতীতে ১৯ জন/টি মেক্সিকান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বরাবর পাঠানো হয়েছিল বলে শনাক্ত করে সিটিজেন ল্যাব।

ইসরায়েলভিত্তিক কোম্পানি এনএসও গ্রুপের তৈরি করা ওই অত্যাধুনিক পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে মেক্সিকোতে আরও যাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে তারা হলেন: উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি অনুসন্ধানকারী সাংবাদিক, বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ ও অ্যাক্টিভিস্ট এবং ২০১৪ সালে ৪৩ কলেজ শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় সরকারের সমালোচনাকারী আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।

এনএসও গ্রুপের দাবি, কেবল অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের শর্তেই তারা সরকারের কাছে পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিক্রি করে থাকে। টরন্টোভিত্তিক সিটিজেন ল্যাবের ইউনিভার্সিটি বলছে, মেক্সিাকো ওই শর্ত ভঙ্গ করেছে। অবশ্য, সরকারের জড়িত থাকার ব্যাপারে কোনও প্রমাণ হাতে নেই বলে জানিয়েছে তারা।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েটোও এ ব্যাপারে তার সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তবে যারা নজরদারির বলি হয়েছেন, তারা সরকারের কথায় বিশ্বাস করেন না। নজরদারির সংযোগ আবিস্কারে স্বাধীন তদন্ত দাবি করেছেন তারা।

/এফইউ/বিএ/