হামলার ৭২ বছর

পরমাণু কর্মসূচির বিস্তারে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত আর নয়: নাগাসাকি

পরাশক্তিগুলোর পারস্পরিক হুমকি এবং পরমাণু প্রকল্পের অব্যাহত উন্নয়নের মধ্যেই স্মরণ করা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ভয়াল নাগাসাকি হামলাকে। দুঃসহ সেই স্মতিকে পেছনে রেখে সাতটি দশক পার করেছে বিশ্ব। তারপরও থামেনি পরাশক্তিগুলোর দম্ভ আর দোষারোপের খেলা। যুক্তরাষ্ট্র এবং এর এশীয় সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এই মুহূর্তে। পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধকরণের পেছনে জাতীয় নিরাপত্তাকেই অজুহাত হিসেবে হাজির করে পরাশক্তিগুলো। হামলার ৭২ তম বর্ষপূর্তিতে এ ধরনের অজুহাতকে 'না' বলার আহ্বান জানিয়েছে নাগাসাকি। আবারও পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার ডাক দিয়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তবে জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাত-এর সংস্কৃতি রুখতে না পারলে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্তি সম্ভব নয় বলেই মনে করেন তারা।  

নাগাসাকি পিস পার্ক
বুধবার নিহতদের স্মরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার আহ্বানের মধ্য দিয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক বোমা হামলার ৭২ তম বার্ষিকী পালন করছে জাপানের নাগাসাকি শহর। ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট শহরটিতে মার্কিন বোমারু বিমান থেকে ফেলা পারমাণবিক বোমার আঘাতে প্রাণ হারান ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ। বুধবার সকালে ঘড়ির কাঁটা যখন ১১টা ২ মিনিটে পৌঁছায় তখনই নাগাসাকিতে বেজে ওঠে শান্তির ঘণ্টা। আর তার পর পরই কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে যায় গোটা শহর। স্মরণ করা হয়, ১৯৪৫ সালে পারমাণবিক বোমা হামলায় নিহতদের। ১১টা ২ মিনিটে ঘণ্টা বাজার কারণ ১৯৪৫ সালের এই সময়েই হামলাটি হয়েছিল। 

বুধবার পিচ পার্কের ওই স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন নাগাসাকির মেয়র তোমিহিশা তাও। ভয়াবহ পারমাণবিক বোমা হামলার ৭২ তম বর্ষপূর্তি পালন করতে গিয়ে জাপানের পিচ পার্কে নাগাসাকি শহরের মেয়র তোমিহিশা বিশ্বে আরেকটি পারমাণবিক বোমা হামলা হওয়ার আশঙ্কা জানান। পারমাণবিক বোমা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তোমিহিশা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত দেশগুলো দাবি করবে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র অত্যাবশ্যক ততদিন পর্যন্ত বিশ্বে পারমাণবিক বোমা হামলার হুমকির অবসান হবে না। পারমাণবিক অস্ত্রকে কেন্দ্র করে বিশ্বের পরিস্থিতি ক্রমাগত উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ছে; আশঙ্কা করা হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এ ধরনের অস্ত্রগুলো আবারও ব্যবহার করা হতে পারে।’

যত দ্রুত সম্ভব পরামাণবিক নিষেধাজ্ঞা চুক্তিতে যোগ দেওয়ার জন্য জাপান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষ পর্যায়ে তখন ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা আর ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে আণবিক বোমা ফেলে মার্কিন বোমারু বিমান। মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায় এ দুটি শহর। ইতিহাসের ভয়াবহতম ওই বোমা হামলায় হিরোশিমায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ এবং নাগাসাকিতে ৭৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন তাদের অনেকে এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন তেজষ্ক্রিয়তার প্রভাব। হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওই ভয়াবহতার স্মৃতি বার বার মানুষের চোখে ভেসে উঠলেও বাস্তবে যেন ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য অনেক দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন জাপানিরা।

/এফইউ/