চলে গেলেন মানবসেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী 'পাকিস্তানের মাদার তেরেসা'

চলে গেলেন পাকিস্তানের ‘মাদার তেরেসা’ খ্যাত জার্মান চিকিৎসক ও নান (খ্রিস্টান ধর্মযাজিকা) রুথ ফাউ। সারাজীবন নিজেকে মানবসেবায় নিয়োজিত রাখা এ নারী বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) করাচির একটি হাসপাতালে ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

২০১০ সালে রুথ ফাউ
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রুথ ফাউয়ের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে পাকিস্তানের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী শাহিদ খাকান আব্বাসি একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে জানানো হয়, রুথ ফাউয়ের শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে।

রুথ ফাউ প্রসঙ্গে আব্বাসি বলেন, ‘অগণিত মানুষকে তিনি নতুন আশা যুগিয়েছিলেন, একাগ্র পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন মানবসেবার কোনও সীমানা থাকে না। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক সেবা নিয়ে গর্ববোধ করি এবং সামনের দিনগুলোতে তিনি আমাদের হৃদয়ে উজ্জ্বল এক প্রতীক হয়ে থাকবেন।’

১৯২৯ সালে জার্মানির লিপজিগে জন্মগ্রহণ করেন রুথ ফাউ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে তার ঘর-বাড়ি তছনছ হয়ে যায়। মেডিসিনে পড়াশোনা করার পর ১৯৬০ সালে মানবসেবা ও ধর্ম প্রচারের জন্য জার্মানি থেকে ভারতবর্ষের উদ্দেশে রওনা করেছিলেন ফাউ। কিন্তু ভিসা-বিষয়ক জটিলতায় তাকে পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থান করতে হয়। ওই সময় করাচির একটি এলাকায় কুষ্ঠ রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। রোগীদের অমানুষিক যন্ত্রণা ফাউকে ব্যথিত করে। তিনি তাদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। কুষ্ঠ রোগীদের সেবা দিতে একটি খুপড়ি ঘর তুলে সেখানে গড়ে তোলেন নিরাময় ক্লিনিক। ধীরে ধীরে তার সেবাকার্যক্রম বিস্তৃত হয়ে পাকিস্তানের সব প্রদেশেই ছড়িয়ে আছে। তার প্রচেষ্টাতেই ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে কুষ্ঠমুক্ত ঘোষণা করা হয়। কুষ্ঠমুক্ত ঘোষিত এশিয়ার প্রথম দেশ পাকিস্তান।

শুধু কুষ্ঠ চিকিৎসাই নয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়ও রুথ ফাউ ছুটে গেছেন অসহায় মানুষের পাশে। দুর্গত মানুষদের সেবায় নিয়োজিত রেখেছিলেন নিজেকে। মানবসেবায় ফাউ এর এ অকৃত্রিম অবদানের জন্য অনেকেই তার নাম দিয়েছিলেন পাকিস্তানের মাদার তেরেসা।

/এফইউ/