মৌসুমি বন্যায় বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় নিহত ২১৮

বাংলাদেশ-ভারত ও নেপালের দক্ষিণাঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় অন্তত ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

WireAP_27c5a334a72840a68c01e2d136c5276a_12x5_992

কর্মকর্তারা জানান, এই বন্যার ভয়াবহতার মাত্রা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছেন বলে জানান। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা আরও কিছুদিন এই বৃষ্টি থাকবে। এদিকে সোমবার ভারতের হিমাচল প্রদেশে অতিবৃষ্টির কারণে ভূমিধসে দুইটি বাস খাদে পড়ে গিয়ে ৪৫ জন নিহত হন।

বার্তা সংস্থা এপির বরাত দিয়ে এবিসি নিউজ জানায়, নেপালের পুলিশ এখনও উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশের মুখপাত্র পুস্কার কার্কি বলেন, নদীর পানি বাধ ভেঙ্গে গেলে অন্তত ৮০ জনের মৃত্যু হয়। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তার।

এছাড়া পাহাড়ধসে ও বাড়ির উপর গাছ পড়েও মারা গেছেন অনেকে। বন্যার পানিতে প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। নেপালে কৃষকরা স্কুল ও উচু জায়গাতে আশ্রয় নিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও পুরো বিচ্ছিন্ন। ভারত সীমান্তবর্তী নেপালি গ্রাম কুনালিতে মূল রাস্তায় তাবু টানিয়ে বাস করছে বাসিন্দারা। কারণ রাস্তার দুইপাশেই পানি উঠে গেছে। পানিতে এখন বিষাক্ত সাপের বিচরণ।

বিদ্যুৎ ও মোবাইল সংযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটির সেনারা বিশুদ্ধ পানি ও শুছেনা খাবার সরবরাহ করছে। ছোট ছোট স্টোভে রান্না করছে দুর্গতরা। কিন্তু ত্রাণকর্মীদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি নেই। 

মার্কিন দাতব্য সংস্থা হিফার ইন্টারন্যাশনালের মুখপাত্র সুমিমা শ্রেষ্ঠ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কৃষকরা ফসল লাগানোর পরেই ভয়াবহ বৃষ্টি শুরু হয়। এজন্য খাবারের ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।’

নেপালের দক্ষিণ সীমান্তে বন্যার কারণে ভেসে গেছে সাতটি জেলা। আর ভারতের বিহার রাজ্যে ঘরছাড়া হয়েছেন প্রায় ৫ লাখ মানুষ। মারা গেছেন দুইজন।

এবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া বন্যা খুবই সাধারণ ঘটনা। কিন্তু বন ধ্বংসের কারণে এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। 

সোমবার বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটে। আবহাওয়াবিদরা জানান, আরও বৃষ্টি হবে এবং বিপদসীমার উপরে বইছে অন্তত ১৮টি নদী। এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছেন ৬ লাখ মানুষ। বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী বলেন, ৯৭০টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। গাছ কিংবা ছাদে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো উদ্ধার করছে সেনাবাহিনী।  

ভারতের আসামে বন্যার পানির কারণে ব্রিজ ভেঙে গেছে, ডুবে গেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর ভেসে গেছে হাজারো ঘরবাড়ি। কর্মকর্তারা জানান, অন্তত ২৫ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪৪০ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ২ লাখের মতো মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন।

রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌছানো অনেক কঠিন হয়ে গেছে। েএজন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে ভারতীয় বিমান বাহিনী। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসামের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলে এক টুইটে জানিয়েছেন।  আসামের কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কের বেশিরভাগ অংশই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঝুকির মুখে পড়েছে অভয়ারণ্যে থাকা অনেক প্রাণী।

/এমএইচ