ধর্মীয় স্বাধীনতা

চীন, তুরস্ক, সৌদি আরবের সমালোচনায় যুক্তরাষ্ট্র

রেক্স টিলারসনধর্মীয় স্বাধীনতা ইস্যুতে চীন, তুরস্ক ও সৌদি আরবের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর সমালোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম রিপোর্ট (আইআরএফআর) ২০১৬ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ ইস্যুতে কথা বলেন টিলারসন। ওই প্রতিবেদনে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ঘটনায় অন্য দেশগুলোর পাশাপাশি এ দেশগুলোর নামও উঠে এসেছে।

'সুনির্দিষ্টভাবে উদ্বেগের দেশগুলো' বা সিপিসি ক্যাটাগরিতে ১০টি দেশকে রাখা হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে বার্মা, চীন, ইরিত্রিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া, সৌদি আরব, সুদান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান। সিপিসি ক্যাটাগরিতে আসতে পারে এমন দেশগুলো হচ্ছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, রাশিয়া, সিরিয়া ও ভিয়েতনাম। এর পরের সারিতে রয়েছে আফগানিস্তান, আজারবাইজান, বাহরাইন, কিউবা, মিসর, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, কাজাখাস্তান, লাওস, মালয়েশিয়া ও তুরস্ক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুনিয়াজুড়ে অনেক সরকার তাদের নাগরিকদের ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতাকে অস্বীকারের জন্য বৈষম্যমূলক আইন ব্যবহার করে। বিশ্বাসের কারণে কাউকে ভয়ের মধ্যে বসবাস করা, গোপনে ধর্ম পালন বা বৈষম্যের শিকার হওয়া উচিত নয়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে  হিন্দুদের ওপর হামলার কথা। এছাড়া এতে ফ্রান্স ও ডেনমার্কে শিখদের ওপর বিধিনিষেধের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বৃদ্ধি, কিছু ক্ষেত্রে গোরক্ষকদের তাণ্ডবের মতো ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিছু ক্ষেত্রে এসব হামলার জন্য দায়ী ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদা। চলতি বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে শতাধিক গ্রামবাসী মিলে হিন্দুদের ৫০টিরও বেশি ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় তারা ১৫টি হিন্দু মন্দিরেও হামলা চালায়। আর এসব করা হয়, ইসলামের প্রতি আক্রমণাত্মক একটি ফেসবুক পোস্টের ওপর ভিত্তি করে।

হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও  অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর উগ্রবাদী দলগুলোর চালানো হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন।

পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বলছেন দেশটিতে সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষায় সরকারের ভূমিকা পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। এছাড়া খ্রিস্টান, হিন্দু, শিখ এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর দাফতরিক বৈষম্য অব্যাহত ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, খ্রিস্টান ও হিন্দু সংগঠনগুলো বিশেষ করে তাদের সম্প্রদায়ের মেয়েদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

ফ্রান্সে পাবলিক স্পেস, স্কুল ও সরকারি অফিসে শিখ ধর্মাবলম্বীদের পাগড়ি পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। ডেনমার্কেও বিচারকদের পাগড়ি পরিধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়ছে অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপরও। কারণ এ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞায় সুস্পষ্ট ধর্মীয় প্রতীকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ডেনমার্কে যিশুখ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ প্রতীকও এর অন্তর্ভুক্ত।

ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত দুই হাজার ৩৭২টি মুসলিমবিদ্বেষী হামলা চালানো হয়েছে। খ্রিস্টান, হিন্দু, শিখ এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছে এক হাজার ৫৫টি অপরাধ। অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ এসব অপরাধের এ তালিকা দিয়েছে। সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস।

/এমপি/