পেটের অস্ত্রোপচারে ডাক্তারের সহযোগী হবে ক্ষুদ্রতম সার্জিক্যাল রোবট

বিশেষ কিছু রোগের অস্ত্রোপচারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এক সার্জিক্যাল রোবট। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান খবর দিয়েছে, ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরাদের উদ্ভাবিত সেই রোবটের সাহায্যে আরও বিস্তৃত পরিসরে ল্যাপরোস্কপি প্রক্রিয়া সম্পাদন করা যাবে। জটিলতা এড়িয়ে অনেক কম কাটাছেঁড়া করেই সম্পন্ন করা যাবে হার্নিয়া, অন্ত্র, প্রোস্টেট, কান, নাক এবং গলার মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অস্ত্রোপচার। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি কর্মকর্তা এই উদ্ভাবনকে মানুষের কৃতিত্ব বলে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্বের ক্ষুদ্রতম সার্জিক্যাল রোবটের সম্ভাব্য রূপকাঠামো

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ জন বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের একটি দল মূলত মোবাইল ফোন ও মহাকাশ শিল্পে ব্যবহৃত কম মূল্যের প্রযুক্তিগুলোকে ব্যবহার করে রোবটটি তৈরি করেছেন। রোবটটির নাম দেওয়া হয়েছে ভেরসিয়াস। বিশেষ করে ল্যাপরোস্কপির মতো পেটের অস্ত্রোপচারের কথা মাথায় রেখে এ রোবটের নকশা করা হয়েছে।

ল্যাপারোস্কপি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি  যাতে করে পেটে ছোট একটু ছিদ্র করে তার মধ্য দিয়ে সরু একটি দূরবীন যন্ত্র ঢুকিয়ে  পেটের ভিতরের অধিকাংশ অঙ্গ – প্রত্যঙ্গ বিষদভাবে পরীক্ষা করা হয়। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা পেটে অপেক্ষাকৃত কম কাটাছেঁড়ার মাধ্যমে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে রোবটটি তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। অপারেশন থিয়েটারে একটি থ্রিডি স্ক্রিনে ভেসে ওঠা নির্দেশনা অনুযায়ী একজন সার্জন রোবটটিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। আশা করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে সার্জারিজনিত জটিলতা ও ব্যথা কমে যাবে এবং রোগী অপেক্ষাকৃত দ্রুত আরোগ্য লাভ করবে।

রোবটটির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ মেডিক্যাল রোবটিকস এর দাবি, আগে থেকেই সার্জিক্যাল রোবটের অস্তিত্ব থাকলেও, নতুন আবিষ্কৃত রোবটটি ব্যবহার করা অপেক্ষাকৃত সহজ। এ রোবটটি বর্তমানে ব্যবহৃত মেশিনগুলোর এক তৃতীয়াংশের জায়গা দখল করবে। রোবট ছাড়া যেসব অস্ত্রোপচার হয় তার চেয়ে এ রোবট দিয়ে সার্জারির খরচ বেশি হবে না বলেও দাবি করছে তারা।

এ রোবট ব্যবহারের একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো এটি মানুষের হাতের মতো দেখতে এবং সেভাবেই কাজ করবে। তাছাড়া রোবটটি রোগীর শরীরের ভেতরে ঢোকার পর রোগীর প্রতিরোধ ক্ষমতা শনাক্ত করতে পারবে। কেমব্রিজ মেডিক্যাল রোবটিকস এর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা লিউক হারেস বলেন, ‘যখন বিজ্ঞানীরা একটি সমস্যার সমাধান করতে চায় তখন তারা প্রকৃতির সহায়তা নেয়। আমরা মানুষের হাত থেকে প্রেরণা পেয়েছি, যা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সার্জিক্যাল যন্ত্র হিসেবে পরিচিত।’

লিউক হারেস আরও বলেন, ‘যদিও প্রচলিত রোবটগুলোর হাত বড় এবং তিনটি জয়েন্ট রয়েছে। কিন্তু আমাদের রোবটের হাত মানুষের হাতের সমানর এবং এগুলোতে চারটি জযেন্ট আছে। এর মধ্য দিয়ে চিখিৎসক স্বাধীনভাবে যেকোনও জায়গায় এঁকেবেঁকে গিয়ে কাজ করতে পারেন।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বসন্তেই রোবটটিকে জনসম্মুখে আনা হবে। আশা করা হচ্ছে, অস্ত্রোপচারে জড়িত চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর, আগামী বছরের শেষ নাগাদ এটি চিকিৎসাকর্মে ব্যবহার করা যাবে।

/এফইউ/বিএ/