ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিমান হামলায় ‘নিহত ৭১’

nonameইয়েমেনে সৌদি আরবের বিমান হামলায় অন্তত ৭১ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার রাজধানী সানায় সৌদি অভিযানে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। হুথি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, সকালে সানা’র উত্তরাঞ্চলের এক হোটেলে আঘাত হানে সৌদি যুদ্ধবিমান। এতে ওই হোটেল ছাড়াও সংলগ্ন এলাকায় বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে অন্তত ৩৫ জন নিহতের খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। তবে ইয়েমেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বুধবারের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৭১ ছাড়িয়েছে।

স্থানীয় চিকিৎসক আলী আল রাকমি বলেন, হামলার সময় ভবনটিতে শতাধিক মানুষ ছিলেন। এদের একটা বড় অংশ ছিলেন কৃষক; যারা সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যবহৃত গাছের পরিচর্যায় সেখানে এসেছিলেন।

হামলাস্থলের নিকটবর্তী উমরাহ হাসপাতালের প্রধান ফাহাদ মারহাব। তিনি বলেন, এ ঘটনায় কোনও আহত নেই। বিমান হামলায় হোটেলের ভেতরে থাকা সবাই নিহত হয়েছেন।

২০১৭ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতেইবা’র ফাঁস হওয়া কয়েকটি ইমেইলে ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের চিত্র সম্পর্কে জানা যায়। ফাঁস হওয়া মেইলের তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনে চলমান সামরিক অভিযানে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট দেশটির বেসামরিক মানুষকে হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। সে অনুযায়ী বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে সৌদি জোট।

ফাঁস হওয়া ইমেইল থেকে জানা যায়, ইয়েমেনে সৌদি জোটকে সহযোগিতা করছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বেসামরিক মানুষ ও স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো হামলায় যুক্তরাষ্ট্রে আরব আমিরাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমিরাতের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। ফলে জোটের গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় দেশ হিসেবে আমিরাত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়।

এই মেইলগুলো ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আরব আমিরাতের নীতিনির্ধারকদের কাছে পাঠিয়েছিলেন ওতেইবা। ইমেইলে তিনি ইয়েমেনের যুদ্ধ ও এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওতেইবা লিখেছেন, হোয়াইট হাউসে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক দীর্ঘ আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে যে, ইয়েমেন যুদ্ধে হতাহতের ঘটনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আমিরাত রাজনৈতিকভাবে সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে।

ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে সৌদি জোট। দুই বছর ধরে চলমান এই অভিযানে ইয়েমেনের প্রায় ১২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। একই সময়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশ মানুষ।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইয়েমেনের বিদ্যমান খাদ্য সংকট চলতি বছরই দুর্ভিক্ষে রূপ নিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতেই মরার ওপর খড়ার ঘা-এর মতো দেশটিতে নেমে এসেছে কলেরার তাণ্ডব। এ বছর এপ্রিল থেকে কলেরার মহামারী শুরু হয় দেশটিতে। এ পর্যন্ত দেশটিতে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ মানুষ। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে তীব্র খাবার সংকটও দেখা গেছে। মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশের জন্যই মানবিক সাহায্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। সূত্র: আল জাজিরা, মিডল ইস্ট মনিটর।