অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সতর্কতা

গুলির ‘গোলকধাঁধা’য় আটকা পড়ছে সিরীয়দের জীবন

সিরিয়ার রাকা শহর থেকে জঙ্গি সংগঠন আইএসকে হটানোর চলমান যুদ্ধ থেকে পালাতে গিয়ে ‘সব পক্ষের’ গোলাগুলির কবলে পড়তে হচ্ছে বেসামরিকদের। আইএস হটানোর লড়াই যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন সিরীয় ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স, আসাদের সরকারী বাহিনী, কুর্দি বাহিনী এবং আইএস রয়েছে মাঠের লড়াইয়ে। আকাশ থেকে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন জোট। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টান্যাশনাল এই পরিস্থিতিকে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য এক ‘ভয়ঙ্কর গোলকধাঁধায়’ আটকে পড়ার সামিল বলে উল্লেখ করেছে।

রাকায় প্রায় ২৫ হাজার বেসামরিক আটকা পড়েছে
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) ওই বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, রাকা থেকে আইএসকে হটাতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের চলমান অভিযানে শহ শত বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। যারা বেঁচে আছেন তারাও ঝুঁকিতে রয়েছেন।

অ্যামনেস্টিতে নিযুক্ত 'সংকট মোকাবিলা সংক্রান্ত' জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডোনাটেলা রোভেরা বলেন, ‘আইএস এর হাত থেকে রাকা পুনরুদ্ধারের লড়াই জোরালো হয়ে ওঠার পর কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিক ভয়ঙ্কর গোলকধাঁধায় আটকা পড়েছেন। সব পক্ষেরই গুলির কবলে পড়ছেন তারা। আইএস বেসামরিকদেরকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে জানার পর এসডিএফ এবং মার্কিন বাহিনীকে অবশ্যই বেসামরিকদের সুরক্ষার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে। নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে হবে এবং নিরাপদে বের হওয়ার রাস্তা তৈরি করে দিতে হবে।’ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট রাকায় বোমা হামলা জোরালো করেছে। আইএস-এর সঙ্গে লড়াই করে রাকার অর্ধেকেরও বেশি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ)।

বেসামরিক অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গোলা ও বিমান হামলা চালানোর জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। এ ধরনের নির্বিচারি হামলা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। রাকার সাবেক এক বাসিন্দা অ্যামনেস্টিকে বলেন, ‘আপনি বাঁচবেন কি মারা যাবেন তা আপনার ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে। কারণ আপনি জানতে পারবেন না পরবর্তী বোমাটি কোথায় পড়তে যাচ্ছে, আর তা না জানলে কোথায় পালাতে হবে সেটিও আপনি ঠিক করতে পারবেন না।’

কেবল মার্কিন জোটই নয়, রাশিয়ার সময়র্থন নিয়ে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী এবং ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোও রাকা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে ইউফ্রেটিস নদীর দক্ষিণের এলাকাগুলোতে আইএস-এর বিরুদ্ধে অগ্রসর হচ্ছে।

বিমান হামলার পাশাপাশি আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে মর্টার শেল হামলার হুমকিতে রয়েছে বেসামরিকরা। এ ধরনের একটি ঘটনার উল্লেখ করতে গিয়ে অ্যামনেস্টি জানায়, এক আবাসিক ভবনে শেল হামলায় ১২ জন নিহত হয়। এর মধ্যে এক শিশুও ছিল।

 এক প্রত্যক্ষদর্শী অ্যামনেস্টিকে বলেন, ‘এটি বর্ণনাতীত, পৃথিবী শেষ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি।’

 মঙ্গলবার স্থানীয়রা আল জাজিরাকে জানান, রাকায় ৪৮ ঘণ্টায় মার্কিন জোটের বিমান হামলায় অন্তত ১০০ বেসামরিক নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, রাকা থেকে লাখো বেসামরিক পালিয়েছে। এখন সেখানে ২৫ হাজার বেসামরিক নাগরিক থাকতে পারেন। মার্কিন জোটের দাবি, বেসামরিকদের প্রাণহানি ঠেকাতে তারা সম্ভাব্য সকল সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, মার্কিন জোট যা করছে তা যথেষ্ট নয়।

২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মধ্য শুরু হওয়া সিরীয় সংঘাত পরে বহুপক্ষীয় গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ছয় বছর ধরে চলা ওই গৃহযুদ্ধে ৪ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।