ছড়িয়ে পড়েছে নদীতে ভেসে ওঠা রোহিঙ্গা শিশুদের মরদেহের ভিডিও

সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কয়েকজন গুলিবিদ্ধ শিশুর দেহ নাফ নদীর তীরে ভেসে উঠছে। এরইমধ্যে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ এটি সম্প্রচার করেছে। তবে স্বাধীন পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে এর সত্যতা নিশ্চিত করার কথা জানায়নি তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ভিডিওতে যে শিশুদের দেখা যাচ্ছে তারা মিয়ানমার পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তবে তারাও এটির স্বাধীন পর্যালোচনা করেনি। এদিকে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছে।
বিপন্ন রোহিঙ্গা বাস্তবতা

সাম্প্রতিক ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের লক্ষ্যে সেনা অভিযান শুরুর কয়েকদিনের মাথায় 'বিদ্রোহী রোহিঙ্গা'রা ২৪টি পুলিশ চেকপোস্টে বিদ্রোহীদের সমন্বিত হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়ে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান জোরদার করে সরকার। এরপর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশছে মৌসুমী বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ছেন সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হচ্ছে তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হচ্ছে মানুষকে। আহত শরণার্থী হয়ে তারা ছুটছে বাংলাদেশ আর ভারতে। পালিয়ে আসতে গিয়ে এ পর্যন্ত পানিতে ডুবে প্রায় ১০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে গার্ডিয়ান।

এবিসি নিউজে প্রচারিত ভিডিও`র স্ন্যাপ শট

এবিসি নিউজে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, নাফ নদীর বালুময় তীরে এক কিশোর ও এক নবজাতকের নিথর দেহ পড়ে আছে এবং সে দেহগুলোর পাশে মানুষের ভীড় জমে আছে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় আরেক তরুণ এক শিশুর মরদেহ নিয়ে ওই দুই মৃতদেহের পাশে রাখছে। ভিডিওতে ওই তিন শিশুর একজনকেও নড়াচড়া করতে দেখা যায়নি এবং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ওই ছোট্ট দেহে আর প্রাণের অস্তিত্ব নেই।

এবিসি নিউজে প্রচারিত সেই ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন: http://www.abc.net.au/news/2017-09-13/relatives-pull-dead-children-from-water/8933916

অতীতে নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ভীনদেশে আশ্রয় নিয়েছেন এমন রোহিঙ্গারা ভিডিওটি দেখার পর ক্ষোভ জানিয়েছেন। এমনই একজন আনোয়ার শাহ। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা তিনি। আনোয়ার জানান, এখনও বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালানোর চেষ্টা করছে বলে তার জানা আছে। এবিসি নিউজকে তিনি বলেন, পাহাড়ে প্রায় ৩০,০০০ রোহিঙ্গা আটকা পড়ে আছে। ওইসব রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে আনোয়ার বলেন, ‘তাদের খাবার নেই, আশ্রয় নেই। তারা কেবল সেখানে মরছে। যখনই তারা দলে দলে সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে, তখনই সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাদেরকে আক্রমণ করছে, তাদের হত্যা করছে।’

এবিসি নিউজে প্রচারিত ভিডিও`র স্ন্যাপ শট ২

আনোয়ার আরও বলেন, ‘আমি শুনেছি আমার বোনদের একজন এরইমধ্যে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে, কিন্তু অন্য দুই বোনের কী পরিণতি হয়েছে তা সম্পর্কে এখনও জানতে পারিনি। তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই এবং আমি জানি না তারা কোথায় আছে।’ 

গত তিন সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশের হাতে প্রায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান জেইদ রা’দ আল ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দিয়েছেন। মহাসচিব গুয়েতেরেজ প্রশ্ন রেখেছেন, এক তৃতীয়াংশ মানুষ দেশ থেকে উচ্ছেদ হলে তাকে জাতিগত নিধন ছাড়া আর কী নামে ডাকা যায়।