রোহিঙ্গা নিধনের পোস্ট সরিয়ে ফেলছে ফেসবুক

রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত পোস্টগুলো সরিয়ে ফেলছে ফেসবুক। শুধু ছবি বা ভিডিও নয়; এমনকি এ বিষয়ক টেক্সট’ও মুছে দেওয়া হচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফেসবুকও এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। একইসঙ্গে ‘আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি’ (এআরএসএ)-কেও ‘বিপজ্জনক সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। নিজস্ব পর্যালোচনার ভিত্তিতে ফেসবুক এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র। একইসঙ্গে এআরএসএ-এর প্রশংসা করা হয় এমন যে কোনও পোস্ট মুছে ফেলতে প্রতিষ্ঠানটির মডারেটরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর ও বর্বর হামলা সংক্রান্ত পোস্ট সেন্সর করছে ফেসবুক। এরপরই জানা যায়, এটা ফেসবুকের দাফতরিক সিদ্ধান্ত।

মিয়ানমার সরকারের অনুরোধের ভিত্তিতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ফেসবুক। তারা বলছে, এটা সম্পূর্ণভাবে আরাকান আর্মির তৎপরতার বিশ্লেষণ করে নেওয়া হয়েছে। কারণ সন্ত্রাস, সহিংসতা বা গণহত্যার মতো অপরাধে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে পোস্ট করা তাদের নীতিমালার লঙ্ঘন।

অন্য যে পক্ষটির কারণে চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিমকে নিজ বাড়িঘর ফেলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে হয়েছে তাদের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ফেসবুক। এই পক্ষটিকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা বা তাদের কোনও পোস্ট মুছে দিতে রাজি নয় ফেসবুক।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি’র মুখপাত্র জাও হাতা তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে আরাকান আর্মি বিষয়ক ফেসবুকের একটি বার্তা শেয়ার করেছেন। ২৬ আগস্টের ওই পোস্টে তিনি আরাকান আর্মি’র পক্ষে যায় এমন যে কোনও পোস্ট নিষিদ্ধ করতে বার্মিজদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তার ওই পোস্ট প্রায় সাত হাজার বার শেয়ার হয়েছে।

সমালোচকরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে ফেসবুক আসলে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ওপরই সেন্সর আরোপ করেছে।

বিষয়টি নিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলেন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ আনওয়ার। তিনি বলেন, ফেসবুক মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমনের চেষ্টা করছে। তাদের কাছে বর্মী শাসকগোষ্ঠীর গণহত্যা যেন কৌতুক বা মজা করার মতো কোনও বিষয়।

ফেসবুক কর্তৃক রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ সংক্রান্ত পোস্ট মুছে দেওয়ার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আসে মোহাম্মদ আনওয়ার-এর মাধ্যমেই। তার অভিযোগের ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য ডেইলি বিস্ট। এতে এমন বহু সংখ্যক স্ক্রিনশট উঠে আসে যেখানে কথিত নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত ফেসবুক পোস্ট মুছে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমনকি শুধু টেক্সট রয়েছে; এমন পোস্টও মুছে দেওয়া হচ্ছে।

কুয়ালালামপুরভিত্তিক সাংবাদিক মোহাম্মদ আনওয়ার রোহিঙ্গা ব্লগার ডটকম নামের একটি সংবাদমাধ্যমে কর্মরত রয়েছেন। তিনি বলেন, রাখাইনের ৪৫ জন সংবাদকর্মীর একটি টিম তার পোর্টালের জন্য কাজ করছে।

ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ আনওয়ার-এর পোস্টগুলো ভুল করে মুছে দেওয়া হয়েছে। তবে দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফেসবুকে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ সংক্রান্ত পোস্টের ক্ষেত্রে সেন্সরশিপ অব্যাহত রয়েছে।

আয়ারর‍্যান্ডভিত্তিক একজন রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট মোহাম্মদ রফিক। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হত্যাযজ্ঞের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করার পর গত ২৮ আগস্ট তার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

মোহাম্মদ রফিক বলেন, আমি এখনও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ছবি ও ভিডিও পাচ্ছি। তবে আমার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে; এমন আশঙ্কায় সেগুলো ফেসবুকে পোস্ট করছি না।