রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চি'র সম্মাননা প্রত্যাহার করলো অক্সফোর্ড

অং সান সু চিশান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী আন সান সু চি-কে দেওয়া 'ফ্রিডম অফ অক্সফোর্ড' খেতাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় সু চি’র নেতিবাচক ভূমিকার কারণে সোমবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শহরটির কর্তৃপক্ষ। 

গণতন্ত্রের জন্য আপোসহীন লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালে অং সান সু চি-কে 'ফ্রিডম অফ অক্সফোর্ড' সম্মাননায় ভূষিত করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড শহরের কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সু চি আর এই পুরস্কারের যোগ্য নন বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তাই তারা সু চি’র সম্মাননা ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সিটি কাউন্সিলে পাস হওয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সু চি আর এ সম্মাননার উপযুক্ত নয়। কারণ, রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর অমানবিক অত্যাচার-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি তার মানবতা দেখাতে পারেননি। তাই তাকে দেওয়া সম্মাননা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অক্সফোর্ড সিটির এমন সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সু চি-র ভাবমূর্তির জন্য নিঃসন্দেহে একটা বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে।

এর আগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিষ্ঠুরতার ঘটনায় সু চি’কে দেওয়া সম্মাননা স্থগিত করে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন- ইউনিসন। গত সেপ্টেম্বরে তার একটি প্রতিকৃতি সরিয়ে নেয় অক্সফোর্ডের একটি কলেজ। 

অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউ কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে,  সু চি’র প্রতিকৃতির জায়গায় একটি জাপানি চিত্রকর্ম বসানো হবে। তবে তার প্রতিকৃতি কেন সরানো হয়েছে বিষয়টি স্পষ্ট করেনি কর্তৃপক্ষ। সু চি’র ওই প্রতিকৃতি কলেজটির মূল ভবনের প্রবেশদ্বারে ছিল।

কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা বেঞ্জামিন জোনস বলেন, “সু চির প্রতিকৃতি একটি 'নিরাপদ স্থানে' সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে জাপানি চিত্রশিল্পী ইয়োশিহিরো তাকাদার চিত্রকর্ম 'কিছু সময়ের জন্য প্রদর্শিত হবে।”

সেন্ট হিউ কলেজ থেকে ১৯৬৭ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন অং সান সু চি। গৃহবন্দী হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেয় অক্সফোর্ড। ওই ডিগ্রি তিনি গ্রহণ করেন ২০১২ সালে মুক্তি পাওয়ার পর।

এর আগে, মিয়ানমারে সামরিক জান্তাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনের সময় সু চি’কে সদস্যপদ দেয় যুক্তরাজ্যের স্বনামধন্য ট্রেড ইউনিয়ন ইউনিসন। সেই সদস্যপদও স্থগিত করা হয়েছে।

সরকারবিরোধী থাকা অবস্থায় সু চি’কে সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান করেছিল যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিধনযজ্ঞের কারণে কর্তৃপক্ষ ডিগ্রিটি পুনর্বিবেচনা করছে। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স স্টুডেন্ট ইউনিয়ন জানিয়েছে, তাদের সংগঠনে সু চিকে সম্মানসূচক যে সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হবে।

উল্লেখ্য, চলমান সহিংসতা থেকে বাঁচতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ামার সেনাবাহিনীর আচরণকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, বার্মায় রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানো হচ্ছে।