দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ বৈঠক

রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে সীমান্তের ১৪০ পয়েন্টে নজরদারি বাড়িয়েছে ভারত

দায়িত্বরত কয়েকজন বিএসএফ সদস্যমিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে ভারত। এরইমধ্যে সীমান্তের ১৪০টি পয়েন্টে নিরাপত্তা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বসানো হয়েছে নজরদারির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। এছাড়া রোহিঙ্গাদের গোপনে ভারত ঢুকতে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর মহাপরিচালক কে কে শর্মা সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের ১৪০টি পয়েন্ট অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এসব পয়েন্ট ব্যবহার করে রোহিঙ্গা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। ফলে বাড়তি জনবল ও নজরদারির সামগ্রী মোতায়েন করে এসব পয়েন্টের নিরাপত্তা শক্তিশালী করা হয়েছে।

ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সম্প্রতি চার দিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএসএফ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গাদের ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম ঠেকাতে নজরদারি অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ২ অক্টোবর শুরু হওয়া এই আলোচনা শেষে শুক্রবার দিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ভারত সফররত বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এবং বিএসএফ-এর মহাপরিচালক কে কে শর্মা।

বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিএসএফ’কে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের নীতি অত্যন্ত পরিষ্কার।

মিয়ানমার সীমান্তে বেষ্টনী দেওয়ার পরিকল্পনাও বাংলাদেশের রয়েছে বলে জানান বিজিবি প্রধান।

বিএসএফ-এর মহাপরিচালক কে কে শর্মা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ ব্যাপারে আমরা দুই দেশই সজাগ রয়েছি। রোহিঙ্গাদের ভারতে প্রবেশের চূড়ান্ত প্রভাব সম্পর্কে আপনাদের খুবই বাস্তবসম্মত ধারণা রয়েছে। ফলে আমরা বিএসএফ ও বিজিবি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। বিজিবি আমাদের নিশ্চিত করেছে রোহিঙ্গাদের চলাফেরা একটা নিয়মের মধ্যে রাখা হবে।

এর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে সমুদ্রসীমা বন্ধ করে দেয় ভারত। এমনকি বাংলাদেশ সীমান্তে মরিচের গুঁড়া ও স্টান গ্রেনেডের ব্যবহারও শুরু করে দেশটি।

দিল্লিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, আমরা তাদের গুরুতর আহত বা গ্রেফতার করতে চাই না। কিন্তু ভারতের মাটিতে রোহিঙ্গাদের সহ্য করা হবে না।

স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করে মানুষকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এর শব্দ ও আলোর ঝলকানি মানুষকে অচেতন করে ফেলে কিন্তু শারীরিকভাবে আহত করে না। আর মরিচের গুঁড়ার গ্রেনেড ব্যবহারে শরীরে জ্বালাপোড়া হয়। ব্যক্তি সাময়িকভাবে অনেকটা সম্বিত হারিয়ে ফেলেন।

এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন বিএসএফ-এর ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ভারতে প্রবেশে চেষ্টাকারী কয়েকশ রোহিঙ্গাকে তাড়িয়ে দিতে আমরা মরিচের গুঁড়াযুক্ত গ্রেনেড ব্যবহার করছি।

বিএসএফ-এর উপ-মহাপরিদর্শক আর. পি. এস জসওয়াল বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের বড় অংশের টহল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সীমান্তরক্ষীরা মরিচের গুঁড়ার গ্রেনেড ও স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করছে।

রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে সমুদ্রসীমা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন ভারতের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি জানান, সমুদ্রসীমা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর অত্যাধুনিক 'ডর্নিয়ার' মেরিটাইম পেট্রোল উড়োজাহাজ, হোভারক্রাফট এবং জাহাজ টহলের ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রবেশ ঠেকাতে পুরো এলাকাতেই এটা করা হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গাদের একটি প্রধান হুমকি মনে করে ভারত। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা শরণার্থী নয়, তারা অবৈধ অভিবাসী।