ইরানের পরমাণু চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা ট্রাম্পের নেই: ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ফেডেরিকা মোঘেরিনিইরানের সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির পরমাণু সমঝোতা থেকে ট্রাম্পের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি। তিনি বলেছেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতা একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। এটি কোনও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি নয়। এটা কোনও একক দেশের বিষয় নয়...। কোনও একটি দেশের প্রেসিডেন্ট এককভাবে এটা থামিয়ে দিতে পারে না। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সেটা এখানে প্রযোজ্য নয়। ইরানের পরমাণু চুক্তি বাতিলের ক্ষমতা কোনও ক্ষমতা ট্রাম্পের নেই। শুক্রবার ট্রাম্পের ঘোষণার কয়েক মিনিটের মাথায় বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ফেডেরিকা মোঘেরিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি কার্যকর পারমাণবিক চুক্তি ভেঙ্গে দিতে পারে না।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ চুক্তির প্রতি তাদের সমর্থনের বিষয়টি পরিষ্কার করেছে এবং এটা ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে।

ইউরোপ ও রাশিয়ার নেতারা বলছেন, ঐতিহাসিক এ চুক্তির ব্যাপারে তাদের সমর্থন অটুট রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো। বিবৃতিতে তিন নেতা বলেন, আমরা আশা করি ইরানের পরমাণু চুক্তির ভিত্তি দুর্বল করে দেওয়া, চুক্তি অনুযায়ী দেশটির ওপর থেকে প্রত্যাহার করা নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করার আগে মার্কিন প্রশাসন এবং দেশটির কংগ্রেস যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের নিরাপত্তায় এর সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনা করবে।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে হুমকি ধমকি এবং আক্রমণাত্মক বাগাড়ম্বরের কোনও স্থান নেই। এ ধরনের পন্থা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এটা সভ্য দেশগুলোর মধ্যকার চুক্তির আধুনিক মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল দেশটির সংবাদমাধ্যম আরএনডি’কে বলেছেন, এ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের চীন ও রাশিয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

অন্যদিকে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল ও সৌদি আরব।

এর আগে শুক্রবার ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ইরান চুক্তি অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। কিন্তু চুক্তির সুবিধা ভোগ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছিলেন, ইরান পারমাণবিক চুক্তি অনুসরণ করছে। তবে ট্রাম্প তাদের সঙ্গে একমত নন।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আগেও আমি অনেকবার বলেছি, ইরান চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ও একপাক্ষিক চুক্তি।  এই চুক্তির লক্ষ্য কী? শুধু ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনকে বিলম্বিত করা? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার কাছে তা অগ্রহণযোগ্য। যে কোনও সময় চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের আছে।