রাখাইনের নতুন ছবি প্রকাশ এইচআরডব্লিউ-এর

মিয়ানমারের জেনারেলদের সম্পদ জব্দের আহ্বান

রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার নতুন ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি নতুন করে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছে। বুধবার নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভয়াবহ নৃশংসতার জন্য দায়ী শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সম্পদ জব্দেরও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

201710asia_burma_rohingya

এইচআরডব্লিউ জানায়, কমপক্ষে ২৮৮টি গ্রাম একেবারে অথবা আংশিক পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ১৭ই অক্টোবর নিজস্ব ওয়েবসাইটে তারা লিখেছে, এসব ঘটনা ঘটেছে ২৫ আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, মংডু, রাথেডাং ও বুথিডাংয়ে মোট ৮৬৬টি গ্রামে মনিটরিং করা হয়েছে এবং সেখান থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মংডু।

২৫ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেখানকার শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। শতকরা ৬২ ভাগ গ্রাম আংশিক কিংবা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চল। এই অঞ্চলের শতকরা ৯০ ভাগ গ্রামই ধ্বংস করা হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, এসব বাড়িঘর আগুন দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যেসব গ্রামে রোহিঙ্গা ও রাখাইনরা পাশাপাশি বসবাস করতেন সেগুলোও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমন গ্রামের মধ্যে রয়েছে ইন দিন এবং ইয়েত হ্নয়ো তুং।

তবে মিয়ানমার সরকার বরাবরই দাবি করছে, আরসার সন্ত্রাসীরা ও স্থানীয় রোহিঙ্গারা এসব অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী। এমন দাবির পক্ষে কোনও শক্তিশালী প্রমাণ দেখাতে পারেনি সরকার।

স্যাটেলাইটে পাওয়া সর্বশেষ ছবিগুলো সম্পর্কে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, এসব ছবিই বলে দেয় কী কারণে মাত্র চার সপ্তাহে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে।

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী শত শত গ্রাম ধ্বংস করে দিয়েছে। হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।’ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শতাধিক রোহিঙ্গার সাক্ষাতকার নিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা মংডু, বুথিডাং ও রাথেডাং থেকে পালিয়ে এসেছেন। তাদের কথায় এমন কোনো ইঙ্গিত মেলেনি যে, রোহিঙ্গা গ্রামবাসী বা আরসা অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের বিষয়ে মিয়ানমার সরকার বা সেনাবাহিনী পক্ষপাতহীন তদন্তও করেনি।

এইচআরডব্লিউ বলছে, এ অবস্থায় জাতিসংঘের ম্যান্ডেট আছে এমন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনকে সেখানে নির্যাতন তদন্তের সুবিধা দিতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উচিত জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর। পাশাপাশি মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের। এর আওতায় থাকবে সামরিক সহযোগিতা বন্ধ ও সেনা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করা। ভয়াবহ নৃশংসতার জন্য দায়ী মিয়ানমারের কমান্ডারদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা উচিত।

ফিল রবার্টসন বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া এবং বাংলাদেশে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে তাদের দুর্ভোগ যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এমন অবস্থায় সচেতন সরকারগুলোর উচিত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন বন্ধের জরুরি আহ্বান জানানো ও সবার মানবাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো।