রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে রাখাইন পরিস্থিতি উন্নয়নের তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে রাখাইনের পরিস্থিতি উন্নয়নের তাগিদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ক’দিন আগে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন থেকে রাখাইনের মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে জানা যায়। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, সুসংগঠিত, সমন্বিত এবং ধারাবাহিক এক শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে রাখাইনকে রোহিঙ্গা বসবাসের অনুপযুক্ত করে ফেলা হয়েছে।  গতকাল রবিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফসল কেটে তা বিক্রি করে দেওয়ার পায়তারা করছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গাদের বসতভিটা ফিরে পাওয়া নিয়েও শঙ্কার কথা জানিয়েছে তারা। একদিনের মাথায় রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানালো যুক্তরাষ্ট্র। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া-পিটিআই এর এক প্রতিবেদন থেকে এ কথা জানা গেছে।
রাখাইন পরিস্থিতি

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে লিপিবদ্ধ হয়েছে সংস্থাটির তদন্তকারীদের ভাষ্য। তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করা দেখে মনে হয়নি কোন অভিযান পরিচালনার সময় সংঘাতের কারণে ধ্বংস হয়েছে। সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা একেবারে পরিকল্পনা করেই গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে, রোহিঙ্গাদের সব সম্পদ ধ্বংস করেছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো এবং তাদের সব সম্পদ যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে সেটা দেখে তাদের মনে হয়েছে মিয়ানমার যে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবেই বিতাড়নের চেষ্টা করছে। গ্রামগুলোতে শুধু যে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে তা নয়। সেখানে তাদের গবাদি পশু, ফসলের ক্ষেত, এমনকি বসত ভিটায় যেসব গাছপালা ছিল সেগুলো পর্যন্ত ধ্বংস করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা রোহিঙ্গা সংকটকে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক মানবিক এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের’ বিষয় আখ্যা দেন। 

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত মিয়ানমারের ছয় কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারভিত্তিক এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, রাখাইনে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবে না। তাদেরকে রাখাইন রাজ্য কর্তৃক নির্মিত আদর্শ গ্রামে রাখা হবে। এসব আদর্শ গ্রামকে স্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে আখ্যায়িত করে জাতিসংঘ এ ধরনের পদক্ষেপের সমালোচনা করে আসছে।ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গা জমি ও ফসলের দাবি করতে পারবে কিনা জানতে চাইলে রাখাইন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী কিয়াই লউইন বলেন, ‘এটি তাদের উপর নির্ভর করছে। যাদের নাগরিকত্ব নেই তাদের কোনও ভূমির মালিকানা নেই।’

noname

রাজ্য সরকারের নথি পর্যালোচনা করে রয়টার্স জানতে পেরেছে, রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ফসল বিক্রি ও চাষাবাদের পরিকল্পনা রয়েছে মিয়ানমারের।  রাজ্য সরকারের তথ্য মতে, রাখাইনের প্রায় ৭১ হাজার ৫০০ একর ভূমিতে ফসল রেখে পালিয়ে এসেছেন প্রায় ছয় লাখ মানুষ। বেশিরভাগ জমিতেই ধান চাষ করা হয়েছে। ফলে এখন তা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এসব ফসলি জমির মধ্যে ৪৫ হাজার একর রোহিঙ্গাদের। চাষাবাদের পরিকল্পনায় ১৪ হাজার ৪০০ একর জমিতে মেশিন দিয়ে চাষ করা হবে। তবে অবশিষ্ট জমিতে কিভাবে চাষ করা হবে তা স্পষ্ট নয়।
ঊর্ধ্বতন সেই মার্কিন কর্মকর্তা ইঙ্গিত করেন, এই মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ধর্মীয় বিভেদ উসকে দিয়ে সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে সেনাবাহিনী। পিটিআই কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সেখানে এমন গোষ্ঠী রয়েছে, যারা এই মানবিক বিপর্যয়কে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি ঘৃণা উৎপাদনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সহিংসতা সৃষ্টি করবে’। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘সে কারণেই মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।’