স্বাধীনতা ঘোষণা কাতালোনিয়ার, কেন্দ্রের শাসন জারি স্পেনের

কাতালোনিয়ার পার্লামেন্টে স্বাধীনতার স্বপক্ষে রায় আসার ঘটনায় পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে স্পেন। ওই ঘোষণার পর অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে সেখানে সরাসরি কেন্দ্রের শাসন জারি করেছে স্প্যানিশ পার্লামেন্ট। কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতা ঘোষণার  কয়েক মিনিটের মাথায় স্প্যানিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট এ সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি সরাসরি স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অর্থাৎ, আঞ্চলিক সরকারের বদলে এখন সেখানে সরাসরি শাসনকার্য পরিচালনা করবে মাদ্রিদ।

কাতালোনিয়ার স্বায়ত্তশাসন বাতিলের বিষয়টি কার্যকর করতে শুক্রবার স্প্যানিশ মন্ত্রিসভার সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়। তার সরকারের এখন প্রথম কাজ হবে আঞ্চলিক সরকারকে বরখাস্ত করে সেখানকার পুলিশ বাহিনীকে মাদ্রিদের নিয়ন্ত্রণে আনা।

শুক্রবার কাতালান পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত ভোটাভুটির পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘স্পেনের প্রতিটি নাগরিককে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। কাতালোনিয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা হবে। সেখানে বৈধতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।’

এর আগে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে দেওয়া ভাষণে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন স্পেনিশ প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়ায় সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সিনেটরদের প্রতি আহ্বান জানান। কাতালোনিয়ার নেতা কার্লেস পুজদেমন, তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং কাতালোনিয়ার সব আঞ্চলিক মন্ত্রীদের অপসারিত করতে চান বলেও জানান তিনি।

রাজয়ের মতে, কাতালোনিয়ায় ‘আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা’ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন এবং এর কোনও বিকল্প নেই। তার অভিযোগ, কাতালোনিয়ার সরকার পরিবারগুলোকে এবং সমাজকে বিভক্ত করছে।

এদিকে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলছে, তাদের কাছে কাতালোনিয়া স্পেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২৭ অক্টোবর শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে দেশটির এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরা হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নরেট স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ন্যাটো মিত্র স্পেনের সঙ্গে আমাদের চমৎকার বন্ধুত্ব এবং স্থায়ী অংশীদারিত্ব রয়েছে। নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের বিষয়ে উভয় দেশ পরস্পরের ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগী। কাতালোনিয়া স্পেনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ স্পেনের জন্য দেশটির সরকারের সাংবিধানিক পদক্ষেপের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।

অন্যদিকে, শুক্রবার স্পেন থেকে স্বাধীন হওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পার্লামেন্ট। ভোটাভুটিতে ৭০ জন এমপি স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১০টি। দুটি ব্যালট ফাঁকা ছিল। তবে বিরোধী দলের এমপিরা ভোটাভুটিতে অংশ নেননি। ভোটাভুটির আগে আগে তারা পার্লামেন্ট থেকে ওয়াক আউট করেন।

কাতালোনিয়ার পার্লামেন্টে যে প্রস্তাবটির প্রশ্নে ভোটাভুটি হয়েছে সেখানে লেখা ছিল: ‘আমরা কাতালোনিয়া প্রজাতন্ত্রকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, আইনের শাসনে পরিচালিত গণতান্ত্রিক ও সামাজিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলব।’

প্রস্তাবটি পাস হওয়ার পর বার্সেলোনায় পার্লামেন্টের বাইরে জড়ো হওয়া স্বাধীনতাপন্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। তবে ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা গেছে মাদ্রিদে। স্প্যানিশ সরকার যখন কাতালোনিয়ার ওপর সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে তখনই আঞ্চলিক পার্লামেন্ট এ রায় দিলো।