সৌদিতে ‘বন্দি’ লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্যে অস্বীকৃতি যুক্তরাষ্ট্রের

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্রসৌদি আরব সফরে গিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি’র ব্যাপারে এখনই কোনও মন্তব্য করতে রাজি নয় যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হেদার নোয়ার্ট। এ সময় তিনি সাদ হারিরি’র পদত্যাগ এবং সৌদি আরবের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেদার নোয়ার্ট বলেন, রিয়াদে নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ক্রিস হেনেজেল বুধবার সাদ হারিরি'র সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের মধ্যে ‘স্পর্শকাতর, ব্যক্তিগত ও কূটনৈতিক’ বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে তার পদত্যাগ লেবাননের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে আমাদের মন্তব্যের কিছু নেই।

সংবাদ সম্মেলনে সাদ হারিরি’র বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান হিদার নোয়ার্ট। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত তথ্যের জন্য সাংবাদিকরা সৌদি সরকার এবং সাদ হারিরি’র দফতরের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

এদিকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সৌদি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে লেবানন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবরান বাসিল বলেছেন, তার দেশের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া বা পদচ্যুত করার অধিকার বাইরের কারও নেই। আমাদের সরকারে কে থাকবে আর কে থাকবে না; সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার এই দেশের জনগণের। বাইরের কোনও শক্তি সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সৌদি আরব সফরে গিয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি’র পদত্যাগের ঘোষণার প্রেক্ষিতে শুক্রবার বৈরুতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

লেবানিজ নেতাদের ধারণা, হারিরিকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করে এখন তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সৌদি আরব। যে কারণে লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না।

লেবানিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ কোনও কিছু তৈরির চেয়ে ধ্বংস করার কাজে বেশি আগ্রহী বলে অভিযোগ করেন বাসিন। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, অন্য দেশের সরকারের পতন ঘটিয়ে এসব দেশ গর্ববোধ করে।

জেবরান বাসিল বলেন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। কাজেই এত সহজে একজন প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

এর আগে সৌদি নাগরিকদের লেবানন ছাড়ার নির্দেশ দেয় সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে দেশটির নাগরিকদের নতুন করে লেবানন সফরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। লেবাননে সৌদি ভ্রমণ সতর্কতার অংশ হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের এ সংক্রান্ত নির্দেশনার পর একই রকম ঘোষণা দেয় কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

সৌদি আরবের সরকারি সংবাদমাধ্যম এসপিএ এজেন্সিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, লেবাননের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশটিতে সফররত বা বসবাসরত নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশটিতে আয়োজিত কোনও আন্তর্জাতিক আয়োজনেও সৌদি নাগরিকদের অংশ না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সৌদি রাজপরিবারে ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন সৌদি আরবে সফররত লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি। টেলিভিশনের সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ভাষণে আল-হারিরি জানান, ইরান ও দেশটির লেবাননি মিত্র হিজবুল্লাহ তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে।

পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে আল-হারিরি বলেন, আমরা এমন অবস্থায় বাস করছি যেখানে এর আগেও গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আমি আশঙ্কা করছি আমাকেও হত্যার টার্গেট করা হয়েছে। লেবাননের কর্তৃপক্ষ এবং হিজবুল্লাহ অবশ্য মনে করে, সৌদি সরকার জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করেছে।

পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি’র ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব সফরে যাওয়ার পর তাকে সেখানে অবস্থান ও পদত্যাগ করতে বলা হয়। তারা (সৌদি) তাকে পদত্যাগপত্র পড়তে বলে এবং এরপর থেকেই হারিরিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।