সৌদি আরবে গ্রেফতার পাঁচ শতাধিক, বেধড়ক পিটুনি ও নির্যাতনের অভিযোগ

রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেল। এখানেই বন্দি রাখা হয়েছে আটককৃত সৌদি রাজপরিবারের সদস্যদেরসৌদি আরবে সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে রাজপরিবার থেকে ২০১ জনকে আটকের কথা জানানো হলেও আটককৃতদের প্রকৃত সংখ্যা ৫ শতাধিক। রাজ দরবারের অভ্যন্তরীণ সূত্রকে উদ্ধৃত করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ পর্যবেক্ষণকারী ব্রিটিশ ওয়েবসাইট মিডল ইস্ট আই এই খবর জানিয়েছে। তারা বলছে, আটককৃতদের  মধ্যে কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির ওপর বেধড়ক পিটুনি ও নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের সময় এতোটাই বাজেভাবে পেটানো ও নির্যাতন চালানো হয়েছে যে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।

সৌদি আরবে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে ৪ নভেম্বর শনিবার থেকে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২০১ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। অভিযানের প্রথম দিনেই ধনকুবের প্রিন্স আল আলওয়ালিদ বিন তালালসহ ১১ জন প্রিন্সকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের অ্যাটর্নি জেনারেল সৌদ আল-মোজেব এক বিবৃতিতে জানান, শনিবার থেকে এ পর্যন্ত ২০৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাতজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০১ জন এখনও আটক রয়েছেন। আটককৃতদের বেশিরভাগকেই রাখা হয়েছে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেলে। 

রাজ দরবারের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আটককৃতের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে সবাইকে না হলেও শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ক্লাসিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তাদের ওপর নির্যাতন চলছে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র। এতে কেবল তারা শরীরে আঘাত পাচ্ছেন কিন্তু মুখে আঘাতের কোনও ছাপ নেই। সেকারণে পরবর্তীতে যখন তারা জনসমক্ষে আসবেন তখন তারা শারীরিক আঘাতের কোনও চিহ্ন দেখাতে পারবেন না। কতিপয় আটককৃতকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নিয়ে বিস্তারিত প্রকাশের জন্য নির্যাতন করা হয়েছে। মিডল ইস্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নির্যাতনের ধরনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

মোহাম্মদ বিন সালমান

দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযান আতঙ্ক তৈরি করেছে। বিশেষ করে যারা আগের বাদশাহ আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ ছিলেন তাদের মধ্যে এ আতঙ্ক বেশি কাজ করছে। ২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় মারা যান বাদশাহ আব্দুল্লাহ। এরপর সৎ ভাই সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ সৌদি আরবের বাদশাহ নিযুক্ত হন। অনেকের আশঙ্কা, দুর্নীতিবিরোধী এ অভিযান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার প্রচেষ্টা। ৮১ বছর বয়সী বাবা বাদশাহ সালমানের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার আগে হাউস অব সৌদের ভেতরের ও বাহিরের সকল শত্রুকে সরিয়ে দিতে চান তিনি।

মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার আটক হয়েছিলেন এমন সাত রাজপুত্রকে বুধবার রাতে রিয়াদের রিটজ কার্লটন হোটেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই আরও জানায়, রাজপরিবারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে বাদশাহর প্রাসাদে নেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুবরাজের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ বিন নায়েফ যিনি গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তার সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে সুলতান বিন আব্দুলআজিজেরও। তার ছেলেদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

যুবরাজ হওয়ার আগে মোহাম্মদ বিন সালমান শপথ নিয়ে বলেছিলেন: ‘আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করছি, দুর্নীতির মামলায় কেউ টিকতে পারবে না-সে যেই হোক না কেন। এমনকি তিনি যদি রাজপুত্র কিংবা মন্ত্রীও হন তবুও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

যারা এখনও আটক হননি তারা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন তার জন্য তাদের প্রাইভেট ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন মোহাম্মদ বিন সালমান। রিয়াদের এক সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই জানায়, বন্ধ করে দেওয়া অ্যাকাউন্ট এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তিদের সংখ্যা আটককৃতদের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। হাউস অব সৌদের এতো জ্যেষ্ঠ রাজপুত্রদের ওপর এই মাত্রার ধরপাকড় অভিযান চালানো তা কেউ ভাবেনি। আর সেকারণেই তারা পালানোর সময় পায়নি এবং ধরা পড়েছে।

সৌদি রাজতন্ত্রের আধুনিক ইতিহাসে রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ঘটনা নজিরবিহীন। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় রাজ পরিবারের ঐক্যকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে সৌদি আরব। কিন্তু তা এখন ভেঙে পড়েছে।