লেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সৌদি আরব: হিজবুল্লাহ

হাসান নাসরুল্লাহলেবাননের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। তারা লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি’কে বলপূর্বক আটকে রেখেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈরুতে দেওয়া ভাষণে এমন মন্তব্য করেছেন হিজবুল্লাহ নেতা শেখ হাসান নাসরুল্লাহ। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া তার এ ভাষণ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, ফিউচার পার্টি’র প্রধান ৪৭ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে সৌদি আরবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তার সঙ্গে কাউকে যেতে দেওয়া হয় নি। রিয়াদে যাওয়ার পর তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সৌদি আরব লেবাননের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মারাত্মকভাবে হস্তক্ষেপ করেছে।

তিনি বলেন, সাদ হারিরি যে ভাষায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তা থেকে পরিষ্কার হয় যে, তাকে এসব বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

হিজবুল্লাহ মহাসচিব বলেন, ‘হারিরি এখন সৌদি আরবে কারাবন্দি এবং নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না। সৌদি আরব নিজের ইচ্ছা লেবানন সরকারের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে। এখানকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভেদের বীজ বোনার চেষ্টা করছে রিয়াদ। তারা আমাদের পরস্পরের মুখোমুখি করে দিতে চাইছে।’

হাসান নাসরুল্লাহ বলেন, ‘লেবাননে সামরিক আগ্রাসন চালাতে সৌদি আরব ইহুদিবাদী ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে তারা কোটি কোটি ডলার খরচ করতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হিজবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের অজুহাতে সৌদি আরব লেবাননকে ধ্বংস করতে চায়। এই সৌদি আরবই ছিল ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রধান কারিগর।’

তিনি বলেন, সাদ হারিরিকে আটক রেখে তাকে অপমান করা হয়েছে। এটা লেবাননের জনগণের জন্য অপমান। চলমান পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন চমৎকারভাবে দেশ সামলে নিচ্ছেন। তাকে কাজের ক্ষেত্রে সব দল ও মতের লোকজনকে সহযোগিতা করতে হবে।

উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ইরানের সমর্থনপুষ্ট লেবাননের শিয়াপন্থী সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ’র ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। দলটি একইসঙ্গে লেবাননের একটি রাজনৈতিক এবং সামরিক সংগঠন। দেশটির পার্লামেন্টেও তাদের প্রতিনিধিত্ব আছে। ২০১৬ সালে সাদ হারিরি’র নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে অংশ নেয় হিজবুল্লাহ।

এর আগে সৌদি রাজপরিবারে ব্যাপক ধরপাকড়ের মধ্যেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন সৌদি আরবে সফররত লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ভাষণে সদ আল-হারিরি বলেন, ‘শহীদ রফিক আল-হারিরি’র হত্যাকাণ্ডের সময় যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, এখন আমরা ঠিক সেই পরিস্থিতিতে বাস করছি। আমি বুঝতে পারছি, আমাকে হত্যার জন্য কোন ধরনের ছক তৈরি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ইরান ও হিজবুল্লাহ তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। লেবাননের কর্তৃপক্ষ এবং হিজবুল্লাহ অবশ্য মনে করে, সৌদি সরকার জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করেছে।

পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী সাদ আল-হারিরি’র ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরব সফরে যাওয়ার পর তাকে সেখানে অবস্থান ও পদত্যাগ করতে বলা হয়। তারা (সৌদি) তাকে পদত্যাগপত্র পড়তে বলে এবং এরপর থেকেই হারিরিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। যে কারণে লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না।

এদিকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সৌদি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে লেবানন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবরান বাসিল বলেছেন, তার দেশের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া বা পদচ্যুত করার অধিকার বাইরের কারও নেই। আমাদের সরকারে কে থাকবে আর কে থাকবে না; সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার এই দেশের জনগণের। বাইরের কোনও শক্তি সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সৌদি আরব সফরে গিয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি’র পদত্যাগের ঘোষণার প্রেক্ষিতে শুক্রবার বৈরুতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

লেবানিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ কোনও কিছু তৈরির চেয়ে ধ্বংস করার কাজে বেশি আগ্রহী বলে অভিযোগ করেন বাসিন। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, অন্য দেশের সরকারের পতন ঘটিয়ে এসব দেশ গর্ববোধ করে।

জেবরান বাসিল বলেন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। কাজেই এত সহজে একজন প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।