সিরিয়ায় প্রতি ১০ জন শিশুর ৮ জন ‘যুদ্ধশিশু’

সিরিয়ার প্রতি দশজন শিশুর আটজনই ‘যুদ্ধশিশু’ বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শরণার্থী অধিকার সংস্থা। রবিবার তুর্কি বার্তা সংস্থা আনদুলুকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সংস্থাটির সহকারী চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ রেসুল ডেমিয়ার বলেন, ‘সিরিয়ায় প্রায় ৮০ শতাংশই যুদ্ধ শিশু। যাদের মধ্যে এখনও ১৭ লাখ শিশু যুদ্ধ কবলিত এলাকাগুলোতে আছে।’ মধ্যপ্রাচ্যের সংবাদ পর্যবেক্ষণের ব্রিটিশ সংস্থা মিডল ইস্ট মনিটর এর এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

2017_11-6-Syrias-Idlib20171105_2_26686994_27515107

প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষ্যে এক বার্তা দেন আব্দুল্লাহ রসুল। বিবৃতিতে তিনি জানান, সিরিয়ার ২০ লাখ শিশু স্কুলে যেতে পারে না। বলেন, ‘সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুরাই। কারণ তারাই সবচেয়ে দুর্বল। ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ শিশু তাদের মৌলিক অধিকার বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সহিংসতার জন্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ডেমিয়ার আরও বলেন, মূলত শিশু অধিকার আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। তবেগত ছয় বছরে, যখনই সিরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের প্রশ্ন উঠেছে, সব আন্তর্জাতিক আইন ও মানবতাকে আমরা ব্যর্থ হতে দেখেছি।

সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ইউনিসেফ এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী নানা বিবাদের শিকার প্রায় ৮৫ লাখ শিশু। এর মধ্যে কেবল সিরিয়াতেই ৬০ লাখ ও বাকি ২৫ লাখ অন্যান্য দেশের।

সিরিয়ার ইদলিবে বসবাস করা মোহাম্দ ওমর সেলিম নামে এক শরণার্থী জানান, ‘ছয় বছর আগে আসাদ বাহিনীর কাছে আমার বাবা গ্রেফতার হন। এরপর বাবার আর কোনও খোঁজ পাইনি আমরা।’ 

ওমর বলেন, ‘সত্যিই আমার ইচ্ছা করে এখন যে তাঁবুতে বাস করছি এর পরিবর্তে একটি বাড়িতে থাকতে। সেই বাড়িটির সামনে একটি খেলার জন্য মাঠ থাকতো। সেখানে আমার ভাইদের সাথে খেলতাম। একটা হাসপাতাল থাকতো যেখানে অসুস্থ হলে চিকিৎসা নিতে পারতাম। আমি শুধু চাই বিশ্বের অন্যান্য শিশুদের মতো সাধারণ ভাবে বাঁচতে। ’

একদিন বিকেলে পরিবারের সাথে পিকনিকে ছিলো আমাল আল-গাফির নামে এক শিশু। সেসময় এক বিমান হামলায় নিজের বা-পা হারায় গাফির। বর্তমানে কৃত্রিম পায়ে ভর করে হাঁটে সে। আসন্ন ‘বিশ্ব শিশু দিবস’কে নিয়ে গাফির বলে, আমি কেবল কামনা করি আর কোন শিশুকে যেন কাঁদতে না হয়।

জাতিসংঘের মতে,  ২০১১ সালের ১৫ মার্চ সিরিয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় গৃহযুদ্ধের। তখন থেকেই যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় ১ কোটির বেশি।