এবার গ্রেফতার সৌদি আরবের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে এবার আটক হলেন দেশটির দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী মোহাম্মদ হুসেইন আল আমাউদি। এর আগে দেশটির শীর্ষ ধনী প্রিন্স ওয়ালিদ বিন তালালকে গ্রেফতারের পর অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

n-Y-large570

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিন তালালের গ্রেফতারের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। তার গ্রেফতারে ধস নামে সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে। দেশটির অর্থনীতিতেও এই ঘটনা প্রভাব ফেলতে পরে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশ্লেষকরা।

এবার আল আমাউদির গ্রেফতারও দেশটির অর্থনীতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

‘দ্য শেখ’ নামে পরিচিত আল আমাউদি সৌদি ও ইথিওপিয়ান দ্বৈত জাতীয়তার নাগরিক। তিনি ইথিওপিয়ার হোটেল, কৃষি এবং জ্যোতিষশাস্ত্রসহ অর্থনীতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিনিয়োগ করেছেন। আফ্রিকার দ্রুততম উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ইথিওপিয়া অন্যতম। বিগত দশ বছরে দেশটিতে আল আমাউদির মোট বিনিয়োগের সঠিক মূল্যায়ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এক বিশ্লেষকের মতে, ইথিওপিয়ায় শেখ মোট ৩৪০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন, যা দেশটির বর্তমান জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।

গত ৪ নভেম্বর যুবরাজ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ১১জন প্রিন্সসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রীকে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন প্রিন্স আল ওয়ালিদ। সৌদি ব্যবসার মূল মুখপাত্র ভাবা হয় তাকে। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের মতে, প্রিন্স ওয়ালিদের সম্পদের পরিমাণ ১৭ বিলিয়ন। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন ওয়ালিদ। তিনি সৌদি আরবের সিটি গ্রুপ ইন করপোরেশনের সবচেয়ে বড় একক বিনিয়োগকারী। তাকে গ্রেফতারের পর সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে ধস নামে। তার মালিকানাধীন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কিংডম হোল্ডিংসের শেয়ারের মূল্য দশ শতাংশ পড়ে যায়। সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জ আরব বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড়।

b2fe883faf67acc4e4e50e2edc1dbbed-59ffdc82d9630

এবার একই আশঙ্কা আমাউদির গ্রেফতারের পরও। আমাউদি দ্বৈত নাগরিক হওয়ায় অর্থনীতির বিরুপ প্রভাব আশঙ্কা করা হচ্ছে ইথিওপিয়াতেও। ২০০৮ সালে ফাঁস হওয়া এক কূটনৈতিক তথ্য অনুযায়ী, ইথিওপিয়ার অর্থনীতিতে আল আমাউদির প্রভাব অনেক। ২০১৩ সালে প্রকাশিত শ্রমিক জোট জরিপ অনুযায়ী, শেখের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় এক লাখ শ্রমিক কাজ করেন। বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষকদের দাবি, গত চার বছরে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইথিওপিয়ার শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রচ্ছদে আল আমাউদির গ্রেফতারের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তার  গ্রেফতার হওয়াকে কেন্দ্র করে ইথিওপিয়ানরা এখন আতঙ্কিত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী হেলমারিয়াম ডেজোলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, দেশের অর্থনীতিতে শেখের বিনিয়োগ, তার গ্রেফতারি দ্বারা প্রভাবিত হবে না। তবে আমাউদির অবর্তমানে দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ইথিওপিয়ান এক বিনিয়োগ কর্মকর্তা জানান, ‘দেশের অর্থনীতি কখনই মাত্র একজন বিনিয়োগকারীর উপর নির্ভর করে না। দেশটিতে প্রায় ১ কোটি মানুষ বাস করে। এতো মানুষ কিভাবে একজন বিনিয়োগকারীর উপর নির্ভর করতে পারে? ব্যাপারটি উপহাসের নয় কি?’  

আল-আমাউদির মার্কিন মুখপাত্র টিম পেন্ড্রিও বলেছেন, ‘সৌদি আরবের বাইরের বিনিয়োগগুলি শেখের গ্রেফতারের ঘটনায় এখনও প্রভাবিত হয়নি’।