ফ্লিনের দোষ স্বীকারের নথিতে ট্রাম্প-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠতার নতুন আলামত

সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন এফবিআইকে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দেওয়ার কথা স্বীকার করার পর শুক্রবার এ সংক্রান্ত নথিগুলো উন্মুক্ত করেছে মার্কিন আদালত। আর সেই নথিগুলো পর্যালোচনা করে আবারও ইসরায়েলের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠতার আলামত পাওয়া গেছে। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদ পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, গত বছর ডিসেম্বরে নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলবিরোধী এক মিসরীয় প্রস্তাব ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল ক্ষমতা হস্তান্তরে গঠিত ট্রাম্পের অন্তবর্তী প্রশাসন। চলতি সপ্তাহেই ট্রাম্প প্রশাসন জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দিতে পারেন; আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এমন আশঙ্কা প্রকাশের কাছাকাছি সময়ে নথিগুলো ফাঁস হলো।
দায়মুক্তির শর্তে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলেন ফ্লিন

রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথোপকথনের জের ধরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লিনকে জাতীয় উপদেষ্টার পদ ছাড়তে বাধ্য করেন ট্রাম্প। অজুহাত তোলা হয় দায়িত্বে অবহেলার। এরপর থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে তদন্তে নামে এফবিআই ও সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটি। মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের তদন্তে নিয়োজিত বরার্ট মুলার ফ্লিনের বিরুদ্ধে ‘জানার পরও ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা, বানোয়াট ও প্রতারণামূলক বিবৃতি দেওয়া’র অভিযোগ আনেন। এক পর্যায়ে দায়মুক্তির শর্তে সাক্ষ্য দিতে রাজি হন তিনি।  শুক্রবার আদালতে হাজির হয়ে ফ্লিন দোষ স্বীকার করেছেন বলে খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। ওইদিন আদালত ফ্লিনের স্বীকারোক্তি পাওয়ার পর তার দায়মুক্তি নিশ্চিত করে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত মামলার নথিগুলো উন্মুক্ত করে দেয়। সেইসব নথি বিশ্লেষণ করেই ট্রাম্পের সেই অন্তবর্তী প্রশাসনের ফিলিস্তিনবিরোধী নীতির আলামত হাজির করেছে মিডল ইস্ট আই।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে অবৈধ উল্লেখ করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি ইসরায়েলবিরোধী প্রস্তাব আনে মিসর। মিডল ইস্ট আই ফ্লিন সংক্রান্ত আদালতের উন্মুক্ত করা নথিগুলোর সূত্রে বলছে, ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দূতিয়ালি করতে ফ্লিনকে ব্যবহার করেছিল ট্রাম্পের অন্তবর্তী প্রশাসন। প্রস্তাবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে রাশিয়াকে চাপ দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন।

অবৈধ ইসরায়েলি বসতি

গত বছর ডিসেম্বরে বসতি স্থাপন বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলবিরোধী প্রস্তাবটি হাজির করেছিল মিসর। তবে হঠাৎই তারা প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করে নেয়। আল জাজিরার তখনকার এক অনুসন্ধানে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই প্রস্তাবটি উত্থাপন থেকে সরে এসেছে মিসর। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সেই জাতিসংঘের প্রস্তাব ঠেকাতে পারেনি ইসরায়েলি মিত্ররা। ২ দিন পরই নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভেনেজুয়েলা, সেনেগালের পক্ষ থেকে একই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।  যুক্তরাষ্ট্র তার চিরাচরিত ইসরায়েলঘেষা অবস্থান থেকে ভেটো প্রদানের বদলে সরে এসে ওই প্রস্তাবের ব্যাপারে ঐতিহাসিক নীরবতা পালন করে। দায়িত্বের শেষ মুহূর্তে এসে ইতিহাসের আলোচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অনন্য এই ভূমিকা নিয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের প্রতি এই ন্যায়সঙ্গত অবস্থান নেবেন বলে একসময় অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি।