ইসরায়েল নামে কোনও দেশ নেই, রাজধানীও থাকতে পারে না: হামাস

ইসরায়েল নামে কোনও দেশ নেই। তাই এর কোনও রাজধানীও থাকতে পারে না। এমন মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। দলটির ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১৪ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকায় আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

nonameইসমাইল হানিয়া বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ বিশেষ করে পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস (জেরুজালেম) শহরকে সুরক্ষা দিতেই হামাসের জন্ম। এই পবিত্র শহর নিয়ে মার্কিন ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দুনিয়াজুড়ে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে তা ফিলিস্তিনি জাতির জন্য একটি বিরাট বিজয়। দুনিয়ার সব মুক্তিকামী মানুষ এ বিষয়ে আমাদের পাশে রয়েছে।

ইসরায়েল-আমেরিকার নতুন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিরোধ গড়ে তোলায় ফিলিস্তিনিদের প্রশংসা করেন ইসমাইল হানিয়া। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার জিইয়ে রাখতে হামাস সদস্যরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার।

ফিলিস্তিনিদের তৃতীয় ইন্তিফাদার মধ্যেই বৃহস্পতিবার মিছিল-সমাবেশের মধ্য দিয়ে হামাসের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হাজারও সাধারণ মানুষ এতে অংশ নেন।

আরব বিশ্বে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর স্পষ্ট হয় ১৯৮৭ সালে। ইন্তিফাদা নামের সেই সময় শুরু হওয়া গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পরের বছর হামাসের আত্মপ্রকাশ। ধর্মভিত্তিক সংগঠনের পরিচয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের সহযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে দলটির। হামাসের প্রাথমিক ঘোষণাপত্র ছিল ইহুদি বিদ্বেষে ঠাঁসা। তবে দলটি ফিলিস্তিনিদের জাতিরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা জোরালো করে তুলতে শুরু করার পর সেই পরিস্থিতির সমান্তরালে বদলে যেতে থাকে হামাস। ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রশ্নকে সরাসরি সামনে আনতে পারায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় হামাস। ২০০৬ সালে দলটি ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তবে হামাসকে নিয়ে ইসরায়েল-আমেরিকার বাইরে সৌদি জোটেরও অস্বস্তি রয়েছে।

noname

সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে হামাসকে সমর্থন দেওয়ার জন্য কাতারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর জবাবে কাতারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল থানি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু আরব দেশগুলোর কাছে হামাস একটি বৈধ প্রতিরোধ আন্দোলন। আমরা হামাসকে সমর্থন করি না। আমরা ফিলিস্তিনি জনগণকে সমর্থন করি।’

প্রথম ইন্তিফাদার (গণজাগরণ) সময় থেকেই পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের প্রতিরোধ জারি রয়েছে। প্রথম ইন্তিফাদার সময়ে হামাসের প্রাথমিক ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছিল, ‘ইসরায়েলকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করাটাই সংগঠনের মূল তবে ফিলিস্তিনি জনতার জাতিসত্তার বোধ জাতিরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা জোরালো করে তুলতে শুরু করার পর, সেই পরিস্থিতির সমান্তরালে বদলে যেতে থাকে হামাস। মূলত দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা আল আকসা ইন্তিফাদার সময়কালে (২০০০–২০০৫) হামাসের রাজনীতিতে এক বিশেষ রূপান্তর ঘটতে শুরু করে। এ সময়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শিক অবস্থানকে ছাপিয়ে যায় ফিলিস্তিনের জাতীয় মুক্তি আন্দোলন।