যৌন অসদাচরণের দায়ে পদত্যাগের ঘোষণা মার্কিন আইনপ্রণেতার

যৌন অসদাচরণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের আরও একজন আইনপ্রণেতা। দেশটির ক্ষমতাসীন দল রিপাবলিকান পার্টির টিকিটে টেক্সাস অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত ওই আইনপ্রণেতার নাম ব্লেক ফ্যারেন্টহোল্ড। তিনি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য। যৌন হয়রানি ও লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করা মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের মধ্যে তার অবস্থান চার নম্বরে।

nonameএর আগে এ মাসেই যৌন অসদাচরণের অভিযুক্ত হওয়ার পর পুনরায় নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন আরও তিন মার্কিন আইনপ্রণেতা। তারা হচ্ছেন মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর আল ফ্রাঙ্কেন, আরিজোনা থেকে রিপাবলিকান পার্টির টিকিটে নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ট্রেন্ট ফ্রাঙ্কস এবং মিশিগান থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট দলীয় আইনপ্রণেতা ও খ্যাতনামা নাগরিক অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট জন কনইয়ার্স। নতুন করে এ তালিকা আরও দীর্ঘ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

যৌন অসদাচরণের দায়ে আলাবামার একজন রিপাবলিকান দলীয় সিনেটরকেও চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। ওই আসনটিতে গত ২৫ বছরে কখনও রিপাবলিকান পার্টি পরাজিত হয়নি।

অভিযুক্ত আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, নারীদের খপ করে ধরা, জোরপূর্বক চুমু দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সারোগেট পদ্ধতিতে সন্তান নেওয়ার জন্য পাঁচ মিলিয়ন ডলার প্রস্তাবের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

মার্কিন নাগরিকদের অস্ত্র বহনের অধিকার, গর্ভপাত ও ট্যাক্সের মতো বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বড় দুই দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা যখন ব্যাপকভাবে বিভক্ত সেই মুহূর্তেই উভয় দলের নেতাদের এমন নৈতিক স্খলনের বিষয়টি সামনে এলো।

ইপসোস এবং ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও পরিচালিত এক জরিপে বলা হয়েছে, প্রতি ১০ জন আমেরিকানের মধ্যে প্রায় নয়জনই যৌন হয়রানির ব্যাপারে কোনও ছাড় দিতে রাজি নয়। তারা বলছেন, সমাজে পরিবর্তন আনতে এর দরকার রয়েছে।

এর আগে গত নভেম্বরে সাবেক মডেল ও রেডিওর উপস্থাপক লিয়ান টুইডেনকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর আল ফ্রাঙ্কেন। ওই মডেলের অভিযোগ, আল ফ্রাঙ্কেন জোরপূর্বক তার বুকে হাত রেখে আপত্তিকর ছবি তুলেছেন, চুমু খেয়েছেন। ২০০৬ সালে আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত মার্কিন সেনাদের জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন কৌতুক অভিনেতা আল ফ্রাঙ্কেন, লিয়ান টুইডেনসহ আরও অনেকে। সেখানেই তার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে।

সম্প্রতি লিয়ান টুইডেন বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ তুললে আল ফ্রাঙ্কেন বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে কিছু মনে করতে পারছি না। তারপরও এ ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইছি।’

লিয়ান টুইডেনের অভিযোগ সামনে আসার পর আল ফ্রাঙ্কেনকে পদত্যাগের আহ্বান জানান তার দলেরই ৩০ সিনেটর। এরপরই সিনেটে দেওয়া বক্তব্যে তার পদত্যাগের ঘোষণা আসে।

খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধেও নির্বাচিত হওয়ার আগে যৌন অসদাচরণের অন্তত ১৭টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সপ্তাহেই ডেমোক্র্যাটিক দলীয় অনেক আইনপ্রণেতা বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের ব্যাপারে কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক তদন্ত দাবি করেছেন। কয়েকজন ট্রাম্পের পদত্যাগেরও দাবি তুলেছেন। তবে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগ সত্ত্বেও মার্কিন নাগরিকরা ট্রাম্পকে নির্বাচিত করেছেন। তারা দেখিয়েছেন এসব অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই।

ট্রাম্পের নিজ দল ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির নেতারা বলছেন, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনা যৌন অসদাচরণের অভিযোগগুলোর তদন্ত শুরুর কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। হোয়াইট হাউসে তার দায়িত্ব পালনকালে যদি কোনও অভিযোগ উঠে তাহলেই কেবল সেটা নিয়ে তদন্ত হতে পারে।