তল্লাশি ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতার কারণেই বিষপানে সমর্থ হয়েছিলেন ‘বসনিয়ার কসাই’

বসনিয়ার কসাইখ্যাত যুদ্ধাপরাধী স্লোবোদান প্রালজাক আদালত কক্ষে যে বিষ ব্যবহার করে আত্মহত্যা করেছেন, তা তার পানের আগে শনাক্ত করা যায়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিসি) অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, তল্লাশি-সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়েই বিষপানে সমর্থ হয়েছিলেন প্রালজাক। কীভাবে তার কাছে ওই বিষ পৌঁছেছিলো তা খুঁজে দেখতে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাজলাক

বসনিয়ায় মুসলিমদের উপর অত্যাচার, অপহরণ ও হত্যার দায়ে সাবেক সেনা কমান্ডার প্রালজাকের বিরুদ্ধে ২০ বছরের সাজা ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসি। সাজা ঘোষণার সময়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে পকেট থেকে একটি ছোট কৌটা বের করে বিষ পান করেন প্রালজাক। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। রবিবার ওই ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের গঠিত ওই আদালত। বিচারপতি হাসান জালো ডিসেম্বরে শুরু তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশের বিবৃতিতে বলেন, ‘যে কোনও পর্যায়ে বিষের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার মতো কিছু সেখানে পাওয়া যায়নি।’ এর আগে ময়না তদন্তের ভিত্তিতে দেওয়া প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছিলো, পটাসিয়াম সায়ানাইড পানের পর হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান প্রালজাক।

হাসান জালো বলেন, ‘তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনি কাঠামো, জাতিসংঘের আটক রাখার স্থান অথবা আদালত প্রাঙ্গণে কোন ফাঁকফোকর খুঁজে পাওয়া যায়নি। জিনিসটির ছোট আকৃতি তল্লাশি নিয়মকানুনের সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়েছে। এছাড়া আইসিটি প্রাঙ্গণ আর আটক রাখার স্থানে থাকা তল্লাশি যন্ত্রপাতি ওই ছোট জিনিসটি শনাক্ত করা কঠিন করে দিয়েছে।’ প্রালজাকের কাছে কীভাবে ওই বিষ নিয়ে আদালতে পৌঁছেছিলো তা এখনও খুঁজে দেখছেন নেদারল্যান্ডের প্রসিকিউরেটররা। তবে বিচারক হাসান জালো বলেন, ‘কখন আর কীভাবে ওই বিষ তার কাছে পৌঁছেছিলো তা নিয়ে কোন উপসংহারে পৌঁছানো অসম্ভব।’

১৯৯১ সালে যুগোশ্লোভিয়া সোশ্যালিস্ট ফেডারেশন ভেঙে পড়ার পরের বছর বসনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে। প্রতিক্রিয়ায় সার্ব বাহিনী দেশটিকে দুই টুকরো ফেলে। তিন বছর ধরে চলে বসনিয়ার গৃহযুদ্ধ। এতে প্রায় এক লাখ মানুষ নিহত হন। ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা সেই গৃহযুদ্ধে বসনিয়ায় মুসলিমদের উপর অত্যাচার, অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় বসনিয়া ক্রোটের ছয় রাজনীতিক ও সামরিক নেতার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে অভিযোগ গঠন করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলেও প্রালজাকের মৃত্যুর পর থেকে ক্রোটরা তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আসছেন। গত বছরের ২৯ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে আপিলের রায় ঘোষিত হয়।