ইরানে অহিংস অসহযোগের ডাক দিলেন নোবেলজয়ী শিরিন এবাদি

রুহানি-খামেনি সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরুর ডাক দিয়েছেন সে দেশের স্বনামধন্য মানবাধিকারকর্মী শিরিন এবাদি। বিক্ষোভের সংবিধানসম্মত অধিকার সমুন্নত রেখে জনতাকে রাস্তায় থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে নোবেল পুরস্কার জিতে নেওয়া সুখ্যাত এই মানবাধিকার-আইনজীবী ইসলামী বিপ্লব পরবর্তী ইরানি শাসনব্যবস্থার ঘোর বিরোধী। ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন সাবেক এই বিচারক। 
শিরিন এবাদি

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও বেকারত্বের প্রতিবাদে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদ থেকে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভটি এরইমধ্যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক সমাবেশে রূপান্তরিত হয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভের ছয়দিনে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন। এমন সময়ে সৌদি মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যম আশারক আল-আওসাতকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন শিরিন এবাদি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স সেই সাক্ষাৎকারের সূত্রে জানিয়েছে, বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সর্বাত্মক অহিংস অসহযোগ শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন এই নোবেলজয়ী।

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর প্রথমবারের মতো উত্তাল স্লোগান উঠেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ঘুষ-দুর্নীতি কিংবা হুথি-হিজবুল্লাহ-ফিলিস্তিনকে সমর্থনের বিরুদ্ধে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ইরানি জনগণকে পানি, গ্যাস, বিদ্যুতের বিল ও কর পরিশোধ না করার পরামর্শ দিয়েছেন শিরিন এবাদি। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে অর্থ প্রত্যাহার করে নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বহুদিন ধরেই ইরানি নেতৃত্ব শিরিন এবাদিকে পশ্চিমা স্বার্থ-রক্ষাকারী হিসেবে দেখে আসছে। তার সঙ্গে সিআইএর সম্পর্ক রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছিল রুহানি-পূর্ববর্তী আহমদিনেজাদ সরকার। ইসরায়েল-ঘেঁষা আখ্যাও পেয়েছিলেন তিনি। নেতিবাচক সম্পর্কের বাস্তবতায় ২০০৯ সালে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান শিরিন এবাদি। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘সরকার যদি ৩৮ বছর ধরে আপনাদের কথা না শুনে থাকতে পারে তবে এখন আপনাদের সময় এসেছে সরকারের কথাও না শোনার।’

সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার ফারাকের কারণে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিই হয়ে উঠেছেন ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তু। বিক্ষোভ ঠেকাতে তিনটি প্রদেশে ইরানে ইসলামী রেভ্যুলুশনারি গার্ডস এর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন চারশ বিক্ষোভকারী। বিক্ষোভটি ‘সফলতা’র সঙ্গে দমন করা হয়েছে বলে দাবি করছে তেহরান।

এদিকে সরকারের সমর্থনেও মিছিল হচ্ছে ইরানের বিভিন্ন শহরে। বুধবার সকালে সরকারসমর্থক কয়েক হাজার ইরানি ওইসব মিছিলে অংশ নেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বিক্ষোভের খবর না এলেও ফলাও করে সেই সমাবেশগুলো সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।