জয়নাবসহ ৮ শিশুর হত্যা ও ধর্ষণের নেপথ্যে এক ‘সিরিয়াল কিলার’

হাতে পাওয়া পাঞ্জাব পুলিশের এক নথির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত এক বছরে কাসুরে জয়নাবসহ যৌন নিপীড়নের পর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১০ শিশু। তদন্ত সূত্রকে উদ্ধৃত করে তারা জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই শিশুদের মধ্যে ৬ জনকে খুন করেছে একই ব্যক্তি। তবে তদন্ত সূত্রের বরাতে পাকিস্তানের জিও টিভি বলছে, ওই সন্দেহভাজন সিরিয়াল কিলারের হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শিশুর সংখ্যা ৮। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সূত্র। 
noname

গত ৪ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) কোরআন ক্লাসে শেষে বাসায় ফেরার পথে পাঞ্জাবের কাসুর শহর থেকে ছয় বছরের শিশু জয়নাবকে তুলে নিয়ে যায় দুস্কৃতকারীরা। সে সময় বাবা-মা ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে থাকায় খালার কাছে ছিলেন জয়নাব। পরে ৯ জানুয়ারি এক পুলিশ সদস্য শাহবাজ খান রোডে আবর্জনার স্তূপ থেকে জয়নাবের মরদেহ উদ্ধার করেন। ময়না তদন্তে দেখা গেছে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে তাকে। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পাকিস্তান। বিক্ষোভ হয় করাচি, কাসুর, আর লাহোরে। বৃহস্পতিবার কাসুর শহরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশ প্রধান কার্যালয়ে হামলা চালানোর চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে নিহত হয় দু'জন। শুক্রবার দেশটির সংসদেও এই ইস্যুতে আলোচনা হয়।

পুলিশের একটি নথি পাওয়ার সূত্রে বিবিসি জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত কাসুরে দশটি একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার শিকার হওয়াদের মধ্যে জয়নাবসহ ছয়জনের দেহে একই ডিএনএ পাওয়া গেছে। ওই ছয়জনের প্রত্যেকেই ছিলো শিশু, প্রত্যেকে তাদের বাড়ির আশেপাশের এলাকা থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর আবর্জনার স্তুপ বা পরিত্যক্ত বাড়িতে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।আর এদের বাড়ি দুই মাইলের মধ্যে।

বিবিসি ৬ হত্যাকাণ্ডে এক ব্যক্তির সংযোগের কথা বললেও পাকিস্তানের জিও টিভি পুলিশসূত্রকে উদ্ধৃত করে বলছে, ওই ব্যক্তি আসল ৮টি হত্যাকাণ্ডে জড়িত। পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শক আরিফ নওয়াজ খান জিও নিউজকে বলেছেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষায় একটা বিষয় খুবই পরিষ্কার যে, আগের সাতটি ঘটনার পর এটা আট নম্বর ঘটনা যাতে একই অপরাধী এমন ভযঙ্কর অপরাধ করেছে।’  তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কারও সঙ্গেই ওই ডিএনএ’র মিল পায়নি পুলিশ। তিনি বলেন, আমরা প্রায় ২২৭ জনকে তদন্ত করেছি আর সন্দেহভাজন ৬৭ জনের ডিএনএ পরীক্ষা করেছি। তবে ওই অপরাধীর সঙ্গে কারও মিল পাওয়া যায়নি।’

এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, নিম্নমানের ছবির কারণে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা কঠিন। তিনি বলেন, ‘সিসিটিভি ফুটেজের রেজুলেশন খুব পরিষ্কার নয়। আমাদেরকে রেজুলেশন বাড়িয়েছি কিন্তু তারপরও তা শত ভাগ শনাক্তযোগ্য নয়। আমরা আবারও তা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’

পাঞ্জাব সরকারের মুখপাত্র মালিক আহমেদ খানও বলেছেন, ‘জয়নাব হত্যা মামলার সন্দেহভাজন একজন সিরিয়ান কিলার। সে বাচ্চা মেয়েদের অপহরণ করে ও হত্যা করে।’ পাকিস্তানের শামা টিভির খবরে বলা হয়েছে, পাঞ্জাব প্রদেশিক সরকারের বিশ্বাস এই ঘটনায় কোনও সিরিয়াল রেপিস্ট জড়িত। জয়নাবে পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের বরাত দিয়ে ওই খবরে বলা হয়, তার হাইমেন (যোনী পর্দা) ছেঁড়া ছিলো। এছাড়া নাকব আর ঘাড়ে নির্যাতনের চিহ্ন ছিলো। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, জয়নাবকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া হত্যার আগে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, তার গলার কাছের হাড় ভাঙা ছিলো। যাতে প্রমাণ হয় তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। জয়নাবের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক কেরাতুলিয়ান আতিক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছেন, জয়নাবের মৃতদেহ পাওয়ার দু্ই থেকে তিন দিন আগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তাকে যৌন নির্যাতনেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তদন্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, তদন্তকারীদের বিশ্বাস গত ৪ জানুয়ারি কোরআন ক্লাস শেষে অপহৃত হওয়ার পর কয়েকদিন অপহরণকারীদের জিম্মায় ছিলো জয়নাব। পরে ৯ জানুয়ারিতে এক মাইল দূরের একটি আবর্জনার স্তুপ থেকে জয়নাবের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বিবিসির প্রকাশ করা সিসিটিভির একটি ফুটেজে দেখা গেছে ৪ জানুয়ারি জয়নাবের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে এক ব্যক্তি।