রহস্যের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ক্যালিফোর্নিয়ার সেই বাড়িটি

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় মুইর উডস রোডের ১৬০ নম্বর বাড়িটি হয়ে উঠেছে এক রহস্যের কেন্দ্র। এখানেই সন্তানদের নিয়ে থাকতেন ডেভিড ও লুইস টুরপিন দম্পতি। রবিবার সেই বাড়ি থেকে ওই দম্পতির ১৩ সন্তানকে মুক্ত করা হয়। মা-বাবাই তাদেরকে আটকে রেখেছিল বলে অভিযোগ সন্তানদের।

1516084055_turpin-residence
বাড়িগুলো বিশাল জায়গাজুড়ে অবস্থিত এবং খুব লাগোয়া। এরকম একটি পরিবেশেও কোনও পরিবার কিভাবে নিজেদের এমন ভয়ঙ্কর একটি কর্মকাণ্ড গোপন করতে পারলেন, তা ভাবিয়ে তুলেছে সেখানকার বাসিন্দাদের। প্রতিবেশীরা এখন অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে মনে করার চেষ্টা করছেন, ওই পরিবারের মধ্যে তারা কোনও অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে পেরেছেন কিনা? কেন বাবা-মা তাদের সন্তানদের এমন অমানবিকভাবে শেকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন?

রিভারসাইড শেরিফের বিবৃতিতে বলা হয়, রবিবার (১৪ জানুয়ারি)  সকালে আটক ছেলেমেয়েদের মধ্য থেকে সতেরো বছর বয়সী একটি মেয়ে পালিয়ে যায় এবং জরুরি সহায়তা বিভাগকে ফোন করে। ওই মেয়েটিই পুলিশকে জানায়, তার আরও ১২ ভাই-বোনকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালায় এবংআটককৃতদের উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, উদ্ধারকৃতরা অপুষ্টিতে ভুগছে, তাদের বয়স দুই থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। এরমধ্যে সাতজনেরই বয়স ১৮ এর বেশি। তাদের শরীর খুব নোংরা অবস্থায় ছিল। খুবই দুর্গন্ধযুক্ত ও নোংরা পরিবেশে তাদের আটকে রাখা হয়েছিলো। পুলিশ জানিয়েছে,কেন সন্তানদের আটকে রেখেছিলেন সেই ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও যুক্তি হাজির করতে পারেননি ডেভিড টুরপিন ও লুইস টুরপিন। তবে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, টুরপিন পরিবারের আচরণ খুব উদ্ভট ছিল। তাদেরকে খুব একটা বের হতে দেখা যেত না। 

ডেভিড ও লুইসের এক প্রতিবেশী ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, টুরপিন পরিবার এমনভাবে থাকতো যেন কেউ তাদের সম্পর্কে কিছু না জানে। ওই প্রতিবেশী বলেন, ‘তাদেরকে কখনও বেড়াতে যেতে দেখা যায় না, কাউকে বের হতে দেখা যায় না। যদি তারা বের হন তখন বোঝা যায় তারা মুদি দোকানে যাচ্ছেন। ব্যস এতোটুকুই।’

আরেক প্রতিবেশী কিম্বার্লি মিলিগান লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসকে বলেন, ‘তাদেরকে (টুরপিন পরিবার) অদ্ভুত মনে হতো, বাচ্চা কেন কখনও খেলতে বের হয় না তা ভেবে আশ্চর্য হতাম।’

একদিনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন কিম্বার্লি। তিনি জানান, এক অনুষ্ঠানে টুরপিন পরিবারের এক বাচ্চাকে হ্যালো বলেছিলেন, কিন্তু সেই শিশুটি এমন করে তাকালো যে দেখে মনে হলো ‘নিজেদের আড়াল করে রাখতে চাওয়া শিশুদেরই একজন সে’।

c8d7c6cf-e312-411e-a150-0871cdf4fffbসরকারি তথ্য অনুযায়ী, টুরপিন দম্পতি অনেক বছর ধরে টেক্সাসে ছিলেন। ২০১০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় যান তারা। টুরপিনকে দুইবার দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয়বার তাকে দেউলিয়া ঘোষণা করার সময় জানা যায় টুরপিন বিমান ও প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রযুক্তি কোম্পানি নরথ্রপ গ্রুম্মানে তুলনামূলকভাবে ভালো বেতনে কাজ করেন। তার স্ত্রী কোনও চাকরি করতেন না। এতো সন্তানের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতেন তিনি। তার ব্যয় আয়ের পরিমাণকে ছাপিয়ে যেতো। ক্যালিফোর্নিয়ার শিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে টুরপিনকে স্যান্ডক্যাসেল দিবা স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসেবে উল্লেখ করা আছে। বেসরকারি এই স্কুলটি টুরপিনের বাড়ির কাছেই। ২০১১ সালের মার্চে স্কুলটি যাত্রা শুরু করেছিল।

টুরপিনের মা-বাবা জানান, তাদের নাতি নাতনিদেরকে বাড়িতেই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তবে চার-পাঁচ বছর ধরে ডেভিড ও লুইস টুরপিনের সঙ্গে দেখা হয়নি বলে জানিয়েচেন তারা। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পারিবারিক ফেসবুক পেজে ডেভিড ও লুইসের পুনর্বার বিয়ের শপথ পাঠ করার বেশ কিছু ছবি আছে। সেখানে গোটা পরিবারকে হাসিখুশি দেখা গেছে।