ভারতে দলিত শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় সন্দেহভাজনের মরদেহ উদ্ধার

ভারতের হরিয়ানায় দলিত শিশুকে ধর্ষণের পর খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে শিশুটির মা-বাবা অভিযোগ করেন, ওই ব্যক্তিই তাদের কন্যাকে অপহরণ করেছে। ওই অভিযোগের পরই লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করে। এরমধ্যেই মঙ্গলবার একটি খালপাড়ে তার নগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। তবে কখন তার মৃত্যু হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে পিটিআই-এর খবরে বলা হয়েছে, মরদেহটি খুবই বিকৃত ছিল।

nonameএকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসি’কে জানান, নিহত ওই সন্দেহভাজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির মরদেহ এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছিল যে, প্রথমে কেউ তাকে শনাক্ত করতে পারেনি। পরে হাতে আঁকা একটি ট্যাটু দেখে চিনতে পারে তার পরিবারের লোকজন।

যে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকেলে মেয়ে টিউশন ক্লাস করার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। প্রতিদিনের মতো রাত ৮টার দিকে তাকে আনতে যাই। তখন তার শিক্ষক জানান, সে ওই দিন সেখানে যায়নি। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাত ১০টার দিকে আমরা পুলিশে অভিযোগ করি।’

নিখোঁজের পর ১৩ জানুয়ারি (শনিবার) পাশের জিন্দ জেলার একটি খালের ধারে ১৫ বছরের ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আল জাজিরা’র খবরে বলা হয়েছে, হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র জেলার ঝানসা গ্রামের ওই শিশু হত্যার আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

বিবিসি হিন্দির মনোজ ধাকা’কে কর্মকর্তারা বলেন, শিশুটির মরদেহের খোঁজ পাওয়ার পর তার মা-বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজনের মা-বাবাকে আটক করে পুলিশ। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

নিহত শিশুটির ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও হরিয়ানার রোহতাক মেডিক্যাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সিনিয়র প্রফেসর ড. এসকে দত্তরওয়াল জানিয়েছেন, মেয়েটিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তাকে সম্ভবত দুইয়ের বেশি ব্যক্তি মিলে যৌন নির্যাতন করেছে। তার যৌনাঙ্গ দিয়ে কোনও কিছু ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার যকৃত ছিড়ে গেছে। সারা শরীর, মুখ, গলা, ঠোঁট ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মনে হচ্ছে বাঁচার জন্য মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেছে।’

নিহতের বাবা অভিযোগ করেছেন, ‘নিখোঁজ হওয়ার ‍দিনই যদি পুলিশ পদক্ষেপ নিতো তাহলে সে বেঁচে যেতো। তার কোনও ক্ষতি হতো না।’

এই হত্যাকাণ্ডকে দিল্লিতে ২০১২ সালের চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার ‘নির্ভয়া’ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় ভারতজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে সরকার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে।

দশম শ্রেণির ওই স্কুলছাত্রীকে রবিবার দাহ করা হয়েছে। তার বাবা অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘তার মা কান্না থামাতে পারছেন না। তিনি এখনও শোকাচ্ছন্ন। আমার মেয়ের সঙ্গে যা হয়েছে তা ভাবতে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। শয়তানগুলো... তার ভেতরের অঙ্গগুলোও নষ্ট করে দিয়েছে। ফুলের মতো মেয়ে আমার। তারা তাকে এভাবে কষ্ট দিলো কেন তা আমি ভাবতে পারছি না!’

তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে পড়াশোনায় খুব মনযোগী ছিল। সে চিকিৎসক হতে চেয়েছিল।’

এই ঘটনা ভারতের মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। ২০১২ সালে দিল্লিতে চলন্ত বাসে মেডিক্যাল ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছিল। সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, পিটিআই, আনন্দবাজার।