মুদ্রা বাতিলের সিদ্ধান্তে পুরোপুরি সফল নয় ভারত

মুদ্রা বাতিল হওয়ায় ব্যাংকগুলোর সামনে ভারতীয়দের ভিড় (ফাইল ছবি) মুদ্রা বাতিলের সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সমন্বয় বাড়ানোর পরেও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় অবৈধ অর্থের প্রবাহ কমাতে পুরোপুরি সফল হয়নি ভারত সরকার। তবে এর কিছু ভালো প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তারা মনে করেন, মুদ্রা বাতিলের ফলে ভারতের অর্থনীতি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় এসেছে। এর ফলে সারা দেশে ভুয়া টাকার সরবরাহ বেশ কমেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুদ্রা বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে তিন হাজার পাঁচশ’ কোটি ভারতীয় টাকার অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে দিল্লি। 

তারপরও ভারতের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অর্থনৈতিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছেন। পাকিস্তানের মদদপুষ্ট এবং নেপাল ও বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানপন্থী অপরাধীরা ভারতের পাঁচশ’ ও দুই হাজার টাকার নতুন নোটও জাল করতে শুরু করেছে। মুদ্রা বাতিলের পর নতুন নোট চালুর কয়েক দিনের মধ্যেই সে নোটেরও জাল নোট বের করছে তারা। আরও ভয়াবহ ব্যাপার হলো অধিকাংশ নোটই আগের মতোই ভারতের মালদহ থেকে ছাড়া হচ্ছে। এক বছর আগে এর তথ্য প্রমাণ সহজেই পাওয়া গেছে।

ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি পিয়ারুল শেখ নামের একজন ১৬ বছর বয়সের কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার কাছে একটি দুই হাজার টাকা মূল্যের ভুয়া নোট পাওয়া গেছে। পরে ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখে দিগম্বর মণ্ডলকে দু’টি দুই হাজার টাকার ভুয়া নোট ও ৮ তারিখে আজিজুর রাহমান নামের আরও একজনকে ৪০টি দুই হাজার টাকার ভুয়া নোটসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, আজিজুল ভুয়া নোটের বাহক হিসেবে কাজ করছিল। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে একটি মিল পাওয়া গেছে, আর তা হলো তারা সবাই মালদহ জেলার লোক। 

ভারত সরকার তার বিতর্কিত মুদ্রা বাতিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে এর কারণ হিসেবে বলেছিল, কালো টাকার সন্ধান ও তা রোধ করার জন্য মুদ্রা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে বাজারে মোট কালো টাকার পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৪৪ কোটি। মুদ্রা বাতিলের  সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর মানুষের মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে দেখা গেছে। ভারতজুড়ে সেসময় মিলিয়ন মিলিয়ন টাকার হাত বদল হয়েছে।

রিজার্ভ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসময় প্রায় ৯৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ কালো টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে যা বিভিন্নভাবে মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, এটিও একটি সফলতা। নতুন করে ব্যাংকে জমা করা অনেক অর্থ এখন বিনিয়োগে ব্যবহৃত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অধিকাংশ নতুন অ্যাকাউন্টের মালিকরা এখন নতুন করে আয়করের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। সরকারের রাজস্ব সংগ্রহে এটি অতিরিক্ত অর্থ যোগ করছে।

এছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ৮ নভেম্বর ২০১৬ থেকে ৮ নভেম্বর ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি অবৈধ টাকা জব্দ করা হয়েছে। অবশ্য নভেম্বর ২০১৫ থেকে নভেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত জব্দ করা অর্থের মূল্য ১৫ কোটি। কলকাতার এলাহাবাদ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘মুদ্রা বাতিলের সিদ্ধান্তে সরকারের সমালোচনা হলেও এর ভালো কিছু প্রভাবও আছে।’

ভুয়া টাকা জব্দ করা হয়েছে এমন ব্যক্তির সংখ্যাও বেড়েছে। ২০০৭-০৮ সালে এটা ছিল আট হাজার ৫২৮। এক বছর পরে তা ৩৫ হাজার ৭৩০ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ২০১৪-১৫ পর্যন্ত মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৫৩ হাজার ৬৩৭টি। কর্মকর্তারা মনে করছেন, মুদ্রা বাতিলের সিদ্ধান্তের ফলে এ সংখ্যা কমে যাবে।