প্রকাশ্যে আফগান তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও গোপনে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য পাকিস্তানকে তাগিদ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এই দাবি করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান তত্ত্বাবধানকারী মার্কিন শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল জোসেফ ভোটেল হাক্কানিকে আলোচনায় বসাতে রাজি করানোর জন্য পাকিস্তানি সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে তাগিদ দিয়েছেন।
এই আলোচনার সঙ্গে সরাসরিভাবে সংশ্লিষ্ট ওই কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্পের টুইট অনুযায়ী এখনও কোনও নির্দেশনা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসেনি। তিনি বলেন, ‘তাদের একমাত্র দাবি ছিল যে পুনরায় যেন আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু হয়।’ তবে পাকিস্তান তাতে রাজি হয়েছে কি না সেটি তার কাছ থেকে জানা যায়নি। ওই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের মূল পার্থক্য হলো আমরা রাজনৈতিক সমাধান চাই আর যুক্তরাষ্ট্র চায় সামরিক। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে শান্তি আলোচনার তাগিদ দিয়েছে দাবি করে ওই পাকিস্তানি কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি তিন সদস্যের তালেবান প্রতিনিধি পাকিস্তানে আলোচনার ক্ষেত্র দেখে গেছে । এই সফর আলোচনার অংশ কি না সেটি নিশ্চিত করে কিছু বলেননি ওই কর্মকর্তা। উড়িয়ে দেননি সম্ভাবনাও।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তালেবানের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার ইসলামাবাদ সফরের কথা নিশ্চিত করেন। আফগান রাজনীতিবিদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় কী সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা জানা যায়নি। সোমবার ইসলামাবাদে এই বৈঠকের সময় আরেকটি গোপন বৈঠকের কথা সামনে আসে। তুরস্কে তালেবান ও হিজাব এ ইসলামির কর্মকর্তারাও বৈঠকে বসেছিলেন। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির এক মুখপাত্র জানান, তিনি ইসলামাবাদের আলোচনার ব্যাপারে অবগত নন। আর তালেবানও কিছু জানায়নি। তুরস্কের আলোচনা নিয়েও অস্বীকার করেছে দুই পক্ষ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই তালেবান কর্মকর্তা বলেছেন, সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুনজাদা সোমবারের সফরের অনুমতি দিয়েছিলেন। প্রতিবছর হাজার হাজার আফগান নিহত হওয়ার যুদ্ধ থামাতে আলোচনায় আগ্রহী ছিলেন তিনি।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, তুরস্কের বৈঠকে তাদের আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিনিধি ছিল না। তিনি বলেন, ‘এটা মানহানি ও শান্তি প্রক্রিয়া ব্যহত করার বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়াস। বিদেশি সেনারা চলে গেলেই আসল আলোচনা শুরু হতে পারে।’
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবান সূত্রটি তাদেরকে জানিয়েছে, ইসলামাবাদের বৈঠকে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন কাতারে তালেবানদের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে আসা সাহাবুদ্দিন দেলোয়ার ও জান মোহাম্মদ এবং তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের শ্যালক মোল্লা জ্যাকব। তারা আফগানিস্তানের জাতীয় ইসলামিক ফ্রন্টের প্রধান পীর সাইদ হামিদ গিলানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গিলানির এক ঘনিষ্ঠ সহকারী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে গিলানির কার্যালয় বৈঠকের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। গত সপ্তাহে তালেবানদের হাক্কানি নেটওয়ার্ক ১৪ আফগান সেনাকে পূর্বাঞ্চলীয় পাখতিয়া প্রদেশ থেকে মুক্তি দেয়। তালেবান ও গিলানির সহকারী নিশ্চিত করেছেন শান্তি আলোচনা শুরুর ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদে সর্বশেষ দাখিল করা রিপোর্টে বলেছেন, শান্তি প্রক্রিয়ায় কোন অর্থপূর্ণ অগ্রগতি হয়নি।
উল্লেখ্য, ৯/১১ হামলার পর ২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। আল কায়েদাকে সমর্থন ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ওই যুদ্ধে তালেবানরা ক্ষমতা থেকে উৎখাত হলে মার্কিন সমর্থনে সেখানে নতুন সরকার গঠিত হয়। কয়েক দফা সাধারণ নির্বাচনে সেই ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও ১৬ বছরেও শেষ হয়নি সন্ত্রাসবাদ বিরোধী যুদ্ধ।