জয়নাবের ডিএনএ পরীক্ষায় জানা গেল আগের শিশুটির ধর্ষণকারী মোদাচ্ছির নয়

জয়নাব হত্যার একবছর আগে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের কাসুরে অপরহরণের শিকার হয়েছিল আরও এক শিশু ইমান ফাতিমা। পাঁচ বছরের ওই শিশুটিকেও অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল। সন্দেহভাজন এক খুনি আটকের পর পুলিশি হেফাজত থেকে ‘পালানোর সময়’  গুলিতে নিহত হয়। এক বছর পর শিশু জয়নাবের হত্যাকারীকে ধরতে ডিএনএ পরীক্ষায় জানা গেছে নিহত যুবক ২১ বছরের মোদাচ্ছির ইমান ফাতিমাকে ধর্ষণের জন্য দায়ী নয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, ভুলভাবে অভিযুক্ত মোদাচ্ছিরের বিচার বর্হিভূতভাবে হত্যার তদন্ত করছে তারা।

মায়ের সঙ্গে গত বছরের জানুয়ারিতে কাসুরে নিহত শিশু ফাতিমা, ডানে হত্যাকারী সন্দেহে নিহত যুবক।

বিবিসির নিউজনাইট মোদাচ্ছিরকে ভুলভাবে হত্যার ঘটনাটি সামনে আনে। ওই অনুষ্ঠানে বলা হয়, জয়নাব হত্যার ঘটনায় পাকিস্তান বিক্ষোভে ফেটে পড়লে অপরাধী শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা যায় ফাতিমাকে ধর্ষণের ঘটনায় মোদাচ্ছির দায়ী ছিল না।

গত ৪ জানুয়ারি নিখোঁজ হওয়ার পর ৯ জানুয়ারি কাসুরের একটি ময়লার স্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয় জয়নাবের মরদেহ। ময়না তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায় ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তাকে। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা যায়, জয়নাবকে ধর্ষণে দায়ী ব্যক্তি আরও সাতটি শিশু ধর্ষণের জন্য দায়ী। তাদের মধ্যে জয়নাব ছাড়াও চারজনকে হত্যা করা হয়েছে। আর এই সিরিয়াল ধর্ষক পাঁচ বছরের ফাতিমাকে ধর্ষণের জন্যও দায়ী।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাসুরে বাড়ির বাইরে রাস্তার ওপরে পাঁচ বছরের চাচাতো ভাই আদিলের সঙ্গে খেলার সময় অপহৃত হয় শিশু ইমান ফাতিমা। বাবার পাশে বসে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে আদিল বলেছে, আমাকে একটি দেওয়ালের দিকে দাঁড় করিয়ে রেখে ফাতিমাকে নিয়ে যায় অপহরণকারী। একটি বস্তায় ভরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। আদিলের পরিবার দাবি করছে, ফাতিমাকে অপহরণের পর কোন বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো আর কে দায়ী তা শনাক্ত করেছিল আদিল। সন্দেহভাজন ওই খুনি ছিল কারখানা শ্রমিক ২১ বছরের মোদাচ্ছির। দুই বছর আগে পরিবারের সঙ্গে কাসুর এসেছিল সে।

তাকে আটকের পর কী ঘটেছিলো- তা নিয়ে দুটি ভাষ্য পেয়েছে বিবিসি। একটি ভাষ্যে বলা হয়েছে, আটকের সময় বাধা দেওয়ায় হত্যার শিকার হয়েছিল মোদাচ্ছির। তবে আরেকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, আটকের পর পুলিশি হেফাজতে স্বীকারোক্তি দেয় মোদাচ্ছির। পরে ‘পালানোর চেষ্টা’ করলে নিহত হয় সে।

তবে মোদাচ্ছিরের পরিবার দাবি করছে, সে অপরাধী নয়, বিষয়টি জানা সত্বেও তাকে হত্যা করেছে পুলিশ। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে মোদাচ্ছিরের মা জামিলা বিবি বলেছেন, প্রকৃত অপরাধীকে ধরতে না পেরে তাকে হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয় পুলিশ। জামিলা বিবি আরও বলেন, ছেলে হারিয়ে মনে হয় সব হারিয়ে ফেলেছি। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। মোদাচ্ছিরকে হত্যার পর কাসুর ছেড়ে চলে যেতে হয় তার পরিবারকেও। জামিলা বিবি বলেন, প্রতিবেশিরাও আমাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইতো না।

মোদাচ্ছিরের পরিবারের সদস্যদের দাবি ফাতিমাকে অপহরণের দিন সন্ধ্যায় আটক করা হয় তাকে। আটকের পর তাকে নিয়ে গিয়ে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ফাতিমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

কাসুরের এক পুলিশ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, ফাতিমার চাচাতো ভাই আদিল মোদাচ্ছিরকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে। ফাতিমার এক আত্মীয় বিবিসিকে জানিয়েছে, থানায় ডেকে নিয়ে পুলিশ তাকে জানিয়েছিল ‘মোদাচ্ছির স্বীকারোক্তি দিয়েছে’।

তবে জয়নাবের হত্যা ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে, ফাতিমাকে হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তি মোদাচ্ছির  নয়। বরং জয়নাবকে হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিই ফাতিমাকে ধর্ষণের জন্য দায়ী। মোদাচ্ছিরের মৃত্যুর পর কাসুরে জয়নাবসহ আরও চার শিশু আক্রান্ত হয়। তাদের তিনজন মারা গেছে। আরও একজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এসব শিশুদের দেহে একই ডিএনএ নমুনা পাওয়া গেছে।

ইমান ফাতিমার বাবা বিবিসিকে বলছেন, এক নিরীহ মানুষকে খুন করা হয়েছে আর প্রকৃত অপরাধী এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে জেনে আমি শঙ্কিত। পুলিশের ওপর এত বিরক্ত যে বলে বুঝাতে পারবো না। আমরা বিচার চাই। চাই প্রকৃত অপরাধী ধরা পড়ুক।