কুর্দিদের সঙ্গে তুরস্কের কোনও সমস্যা নেই: এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, ‘এটা খুবই পরিষ্কার যে কুর্দি নাগরিকদের সঙ্গে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। এটা কুর্দিশ করিডোরেরও বিষয় নয়। বরং বিষয়টি হচ্ছে সন্ত্রাসীদের করিডোর গুঁড়িয়ে দেওয়ার।’ সোমবার রাজধানী আঙ্কারায় এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানএরদোয়ান বলেন, তুরস্কের লক্ষ্য পূরণ হলেই যত দ্রুত সম্ভব আফরিনের ‘অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ’ শেষ করা হবে। এই অভিযানে ওই অঞ্চলে তৎপর সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সিরিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি দেশটির জনগণের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষায় অবদান রাখা।

সিরিয়ায় তুরস্কের ‘অপারেশন অলিভ ব্রাঞ্চ’ পরিধি সীমিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানেরও সমালোচনা করেন এরদোয়ান।

রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমার প্রশ্ন আফগানিস্তানে কি আপনাদের সুনির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা রয়েছে? কখন এটা (মার্কিন সামরিক উপস্থিতি) শেষ হবে? ২০০৩ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার আগে আপনারা ইরাকে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু এখনও আপনারা সেখানে রয়ে গেছেন।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, কাজ শেষ হয়ে গেলে আফরিনে অবস্থানের কোনও ইচ্ছে আমাদের নেই। আমরা জানি কিভাবে সরে আসতে হয়। এজন্য আমাদের কারও অনুমতি নেওয়ার ইচ্ছে নেই।

এদিকে সিরিয়ার আফরিনে তুরস্কের অভিযানে নতুন মাত্রা পেয়েছে দেশটিতে চলমান সাত বছরের গৃহযুদ্ধ। সেখানে ইতোমধ্যে ১৫৩টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে তুর্কি বাহিনী। বিপরীতে পাল্টা লড়াইয়ের ঘোষণা ‍দিয়েছে সশস্ত্র কুর্দি বিদ্রোহী গোষ্ঠী ওয়াইপিজি। এই হামলা সিরিয়ার জটিল রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণকে আরও বেশি জটিল করে তুলেছে।

১৯ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার সিরিয়া সীমান্তবর্তী আফরিন ছিটমহলে কুর্দি বিদ্রোহীদের ওপর হামলা শুরু করে তুরস্ক। দেশটি বলছে, তারা শহরটিকে সন্ত্রাসীদের করিডোর হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেবে না। আর তা নিশ্চিত করতেই হামলা চালানো হয়েছে।

এর আগে সিরিয়ার তুরস্ক সীমান্তবর্তী এলাকায় কুর্দি বিদ্রোহীদের নিয়ে শক্তিশালী সীমান্তরক্ষী বাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন নেতৃত্বাধীন আইএসবিরোধী জোটের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, কুর্দি সমর্থিত এসডিএফের ৩০ হাজার সদস্য নিয়ে ওই বাহিনী গঠন করা হবে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, কুর্দিদের দখলে থাকা সিরিয়ার আফরিন ও মানবিজ এলাকায় তুর্কি সামরিক বাহিনী যত দ্রুত সম্ভব সমাধানে পৌঁছাবে।

তুর্কি বাহিনীর এই অভিযানে সিরিয়ার জটিল রাজনৈতিক ও সামরিক সমীকরণ আরও বেশি জটিল হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কুর্দি ওয়াইপিজি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এই হামলা ট্রাম্প প্রশাসনকে ন্যাটোভুক্ত তুরস্কের  মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। গত অক্টোবরে আইএসের কাছ থেকে রাক্কা শহর দখলমুক্ত করতে ওয়াইপিজি যু্ক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীকে সহায়তা করেছে। বিপরীতে সিরিয়ায় কুর্দিদের উত্থানকে আইএসের মতোই ভয়ঙ্কর হিসেবে বিবেচনা করে আসছে তুরস্ক। দেশটির আশঙ্কা, বিদ্রোহীদের এমন উত্থানে তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের কিছু ভূখণ্ড নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

সিরীয় কুর্দিদের বেশিরভাগই দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সশস্ত্র শাখা ওয়াইপিজি ২০১২ সালে ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব পাড়ের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই আঙ্কারা অস্বস্তিতে রয়েছে। কেননা পিকেকে ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি ‍দিয়েছেন।