১৫২ বছর পর বুধবার একসঙ্গে দেখা যাবে সুপারমুন, ব্লু মুন ও চন্দ্রগ্রহণ

প্রায় ১৫২ বছর পর আগামী ৩১ জানুয়ারি (বুধবার) আরেকটি বিরল মুহূর্তের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বিশ্ব। এদিন একইসময়ে ব্লু মুন, সুপারমুন ও চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। সর্বশেষ ১৮৬৬ সালের ৩১ মার্চ এমন বিরল দৃশ্য দেখা গিয়েছিল।

সুপার মুন
সাধারণত আমরা প্রতি মাসে একটি পূর্ণিমা দেখতে পাই, কিন্তু কখনও কখনও একই মাসে দু’টি পূর্ণিমা ঘটে থাকে। মাসের এই দ্বিতীয় পূর্ণিমাটিই হচ্ছে ব্লু মুন। চাঁদ পৃথিবীর সবথেকে কাছে চলে আসার অবস্থাকে সুপারমুন আখ্যা দিয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবী থেকে চাঁদের এই নিকটতম অবস্থানকে অনুভূ বা পেরিজি বলা হয়। চাঁদ যখন পৃথিবীর খুব কাছে অবস্থান করে তখন চাঁদকে পৃথিবী থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক বড় আর উজ্জ্বল দেখায়। পূর্ণ গোলাকার চাঁদের এই অবস্থাকে সুপারমুন বলা হয়। আর পৃথিবী যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্য চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে, তখন পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করে। পৃথিবী থেকে তাকালে চাঁদকে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে কিছু সময়ের জন্য অদৃশ্য মনে হয়। এই ঘটনাকে চন্দ্রগ্রহণ বলা হয়। এই তিনটি মহাজাগতিক ঘটনা ৩১ জানুয়ারি একইসঙ্গে ঘটতে যাচ্ছে যা অপরিচিত না হলেও বিরল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে,  ৩১ জানুয়ারি সূর্যাস্তের আগে উত্তর আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চল থেকে এ বিরল দৃশ্য দেখা যাবে। আর আন্তর্জাতিক তারিখ রেখার কারণে মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ এলাকায় এ দৃশ্য দেখা যাবে ৩১ জানুয়ারি সূর্যাস্তের পর। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি একটি সুপারমুন দেখা গিয়েছিল। ৩১ জানুয়ারি আরেকটি সুপারমুন দেখা যাবে। একই মাসে দ্বিতীয় পূর্ণিমা বলে এটি ব্লু মুনও। আবার এদিন চন্দ্রগ্রহণও হবে।

সাধারণ হিসেবে বলা যায়, চন্দ্র বছর সৌর বছরের তুলনায় গড়ে এগারো দিন কম হয়ে থাকে। এই অতিরিক্ত দিনগুলোর কারণে গড়ে প্রতি ২ দশমিক ৭ বছরে সৌরবর্ষপঞ্জীতে এক মাসে দু’টি পূর্ণিমা ঘটে। একইভাবে প্রতি ১৯ বছরে ৭ বার দেখা পাওয়া যায় ব্লু মুনের।  প্রায় ৪০০ বছর ধরে চলে আসা ‘ব্লু ‍মুন’ ধারণাটির জন্য প্রথমে ভাবা হত তা আসলেই নীল দেখায়। তবে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন ‘ব্লু মুন’ প্রকৃতপক্ষে দেখতে মোটেও নীল নয়। তবে আকাশে ধুলোবালি বা ধোঁয়ার কারণে চাঁদকে কখনও কখনও সাময়িকভাবে নীলাভ মনে হতে পারে। এটি সময়ের ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হওয়া একটি মহাজাগতিক ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। সাধারণত সৌর বর্ষপঞ্জিতে ১২টি পূর্ণ চন্দ্র মাস হয়ে থাকে। তবে সৌর মাসের তুলনায় চন্দ্র মাসের দৈর্ঘ্য কম। চান্দ্রমাস ২৯.৫ দিনে সম্পন্ন হয়। এ বছর জানুয়ারি ও মার্চ মাসে দুই বার করে পূর্ণিমা দেখা যাবে। তাই এক ব্যতিক্রমী বাস্তবতায় দুই মাসেই ব্লু মুনের দেখা মিলবে। সাধারণত ১৯ বছর পর পর এমন এক বছরে দুইবার ব্লু ‍মুনের দেখা পাওয়া যায়। এর আগে ১৯৯৯ সালেও জানুয়ারি ও  মার্চ মাসে ব্লু মুনের দেখা পাওয়া গিয়েছিল। এরপর একই বছরে দুই বার ব্লু মুন দেখা যাবে ২০৩৭ সালে।

সূত্র: ফার্স্ট পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান, কোয়ার্টজ