ট্রাম্পের 'স্টেট ইউনিয়ন ভাষণ' কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

প্রথমত সাংবিধানিক রীতি বলেই যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও পরিকল্পনায় স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত প্রথমবারের মতো ট্রাম্প এই ভাষণ দেবেন এবার। এই ভাষণের মধ্য দিয়েই তিনি আসছে বছরের জন্য মার্কিন অর্থনীতি ও বাজেট সম্পর্কে নিজের মূল্যায়ন কংগ্রেস তথা জাতিকে জানিয়ে দেবেন। তার বক্তব্যে দেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, সামরিক সম্পৃক্ততা, সাম্প্রতিক বা চলমান বিভিন্ন সংকট সম্পর্কে বিবেচনার বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের স্পষ্ট অবস্থান জানা যাবে ওই ভাষণ থেকে।
noname

স্টেট ইউনিয়ন ভাষণ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক পুরনো একটি রীতি। দেশটির সাংবিধানিক রীতি অনুযায়ী নির্ধারিত সময় পর পর কংগ্রেসকে স্টেট ইউনিয়ন সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে প্রেসিডেন্টের। তিনি যেসব বিষয়কে প্রয়োজন ও সমীচীন মনে করেন, বিবেচনায় নেওয়ার জন্য সেইসব প্রস্তাবের ব্যাপারে কংগ্রেসের কাছে সুপারিশও করতে পারেন। এই ভাষণ দেশের নীতি নির্ধারণে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সারা বছর কোন ধরনের নীতি গ্রহণ করা হবে তাও এই ভাষণে নির্ধারিত হয়। এটা প্রতি সপ্তাহে দেওয়া ভাষণের মতো নয়। পরবর্তী এক বছর কীভাবে দেশ পরিচালিত হবে তা সম্পর্কেই ভাষণটি দেওয়া হয়ে থাকে। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হওয়ায় প্রত্যেক মার্কিন নাগরিকসহ বিশ্ববাসীও এই ভাষণকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। 

সাম্প্রতিক স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণগুলোতে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে বিরূপ পরিবেশ থাকার পরও মানুষকে আশাবাদের কথা শোনানো হয়েছে। রোনাল্ড রিগ্যানের পর থেকে প্রায় সব প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের একতাকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলে আসছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে,. কংগ্রেসের যৌথ সভা হওয়ায় ওই ভাষণে প্রেসিডেন্ট সামনের দিনের বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপের বিষয়েও নির্দেশনা দিতে পারেন। মূলত তারাই এসব বাস্তবায়ন করে থাকেন। গৃহীত বা ভবিষ্যতমুখী পদক্ষেপ সংক্রান্ত প্রস্তাবের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবেন ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এবারের ঘণ্টাব্যাপী ভাষণের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘নিরাপদ, শক্তিশালী ও গর্বিত যুক্তরাষ্ট্র গড়া’। তিনদিনের সরকারি অচলাবস্থা ও সরকারি তহবিলের মেয়াদ ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকায় বিষয়টি সামনে নিয়েই এই বক্তব্য দিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। দেশটির অভিবাসন আইন নিয়ে এখনও রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।

ভাষণে প্রকাশ করা পরিকল্পনার বিষয়ে বিরোধীদের মন্তব্যও জানার সুযোগ রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।  তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনার পরিবর্তনও করতে পারবেন। অথবা আগের পরিকল্পনায় ভালভাবে অগ্রসর হতে পারবেন।  এর মাধ্যমে নিজ দলের পাশাপাশি বিরোধী রাজনীতিকদেরও নিজের মতের পক্ষে আনার একটি সুযোগ পাবেন ট্রাম্প।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিয়ন নিয়ে মুখে ভাষণ দিলেও ব্যাপারটি তখন বাধ্যতামূলক ছিল না। ওই সময় লিখিত বিবৃতি দিলেও চলত। ১৭৯০-১৮০০ সাল পর্যন্ত তা বক্তব্য আকারে উপস্থাপন করা হয়। ১৮০১ সাল থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস শুরুর সময় প্রেসিডেন্টরা একটি বিশাল বিবৃতি লিখে পাঠাতেন। আর ১৯১৩ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টদের কেউ লিখে আবার কেউ বক্তব্যের মাধ্যমে কংগ্রেসকে তার পরবর্তী বছরের পরিকল্পনার কথা জানাতেন। তবে ১৯৩৩ সাল থেকে ব্যতিক্রম ছাড়া লিখিত বক্তব্য বাদ দিয়ে সরাসরি ভাষণকে মানসম্মত বলে বিবেচনা করা শুরু হয়। ওই সময় থেকে অনেকেই রেডিও’র মাধ্যমে ভাষণে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন।