শাদে অক্সফাম কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নিপীড়নের অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে ব্রিটিশ সংস্থাটি। একে মুষ্টিমেয় অক্সফাম কর্মীর অগ্রহণযোগ্য আচরণ হিসেবে দেখছে তারা। অভিযোগটিকে বিশ্বজুড়ে দারিদ্র ও অবিচারের বিরুদ্ধে কর্মরত হাজার হাজার নিবেদিত কর্মীর বিশ্বাসের প্রতি অমর্যাদা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে তারা। আশ্বাস দিয়েছে, যথাযথভাবে সেখানকার যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তের। অক্সফামের অঙ্গীকার করেছে, যৌন নিপীড়নের সংস্কৃতিতে যথাযথ পরিবর্তন আনবে তারা।
ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতিতে ২০১১ সালে হাইতিতে কর্মরত অক্সফামের কয়েক কর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি ২০০৬ সালে শাদে অক্সফাম কর্মীদের যৌন-কর্মী ব্যবহারের অভিযোগ সামনে এসেছে। অক্সফাম বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘সম্প্রতি পাওয়া এসব অভিযোগে আমরা বিস্মিত এবং ভীত।’ শাদের অভিযোগ নিয়ে যথাযথ তথ্য এখনই এক জায়গায় করতে পারছে না অক্সফাম। অভিযোগটিকে ‘সীমিত সংখ্যক ব্যক্তির অগ্রহণযোগ্য আচরণ ও সংকট’ আখ্যা দিলেও তা মোকাবিলায় সামগ্রিক পরিবর্তনের অপরিহার্যতা সৃষ্টি হয়েছে বলে স্বীকার করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
যৌন নিপীড়নের অভিযোগকে অক্সফামের উচ্চতর নৈতিকতাবোধের বিপরীতে একটি ভয়াবহতার চিহ্ন আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি। তারা লিখেছে, ‘এটা এমন এক অবস্থা যেখানে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা একদল মানুষ তাদেরই হেনস্তা করেছে, যাদের সুরক্ষায় তারা নিয়োজিত ছিলেন।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যৌন নিপীড়নে জড়িতরা ‘বিশ্বজুড়ে অক্সফামের দারিদ্র ও অবিচার রুখতে কর্মরত হাজার হাজার নিবেদিতপ্রাণ কর্মীর বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছে।’
নির্যাতনের শিকার নারী ও কিশোরীদের পাশে দাঁড়ানোকে অগ্রাধিকার দেয় বলে দাবি করেছে অক্সফাম। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘যৌন নিপীড়নকারীদের সমূলে উৎপাটন করতে চায় অক্সফাম। নারীদের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের কাজ। বিশেষত যাদের অবস্থান দুর্বল, তাদেরকেই মূল্যবোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছি আমরা। বিশ্বজুড়ে নারীদের অধিকার রক্ষার লড়াই করে যাওয়া একটি সংস্থা হিসেবে আমরা যাদের সঙ্গে কাজ করি; নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক, সহযোগী ও কর্মীদের যৌন হেনস্তা থেকে তাদের রক্ষা করার বিশেষ দায়িত্বও আমাদের রয়েছে’।
বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, হাইতির ঘটনা তদন্তে অক্সফাম নিবেদিতপ্রাণ একটি সেফগার্ডিং টিম গঠন করেছে। তারা নিপীড়ন সংক্রান্ত তথ্য ফাঁসের সুযোগকে অবারিত করেছে। প্রণয়ন করেছে আরও বেশকিছু জরুরি নীতি। তারা বলছে, ‘এইসব পদক্ষেপের মাধ্যমে কেবল যৌন নিপীড়ন প্রতিহত করা যাবে তাই নয়, খোদ নিপীড়ন সংঘটিত হওয়ার পথও রুদ্ধ হবে।’
অক্সফাম স্বীকার করেছে, ২০১১ সালে হাইতিতে সংঘটিত যৌন নিপীড়নের অভিযোগগুলোর ব্যাপারে তেমন কিছু করতে পারেনি তারা। জানিয়েছে, তখন তাদের যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত নীতিমালা এখনকার মতো শক্তিশালী ছিল না। ‘এবার শাদের ঘটনার ক্ষেত্রে তথ্য নিশ্চিত করতে আমরা কঠোরভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছি’ বলে জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
‘শাদ থেকে অভিযোগ ওঠার পর থেকেই আমরা বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছি। তবে এটা পরিষ্কার যে, আমাদের সংস্কৃতিতে যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে পারিনি। এছাড়া বিশ্বব্যাপী কাজ করা মানুষদের রক্ষায় যথেষ্ট কঠোর নীতিমালাও আমরা প্রণয়ন করতে পারিনি। আমরা এখন সেটাই করছি। তবে আমাদের আরও বড় পরিসরে অনেক কিছুই করতে হবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অক্সফামের সদস্য হিসেবে আমরা এর মূল্যবোধের প্রতি নিবেদিত। এসব নির্যাতনের ঘটনায় আমরা সত্যিই ব্যাথিত। আর আমরা যৌন নির্যাতনের এসব ঘটনা মোকাবিলা করে নির্যাতনের শিকারদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সত্যিকার পরিবর্তনের পথে রয়েছি।’
বিবৃতিতে ‘অক্সফামের কনফেডারেশনের ২২ নির্বাহী পরিচালকের মধ্যে ১৫ জনই নারী’ জানিয়ে দাবি করেছে, যৌন নিপীড়নের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অক্সফাম ইন্টরন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক উইনিই বাইয়ানিমা যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে ‘অবক্ষয়’ আখ্যা দিয়ে তা নির্মূলে বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, ‘আশা করি, আমরা সমর্থকদের বিশ্বাস পুনস্থাপন করতে পারবো। যাতে মুষ্টিমেয় লোকের কর্মকাণ্ড অক্সফামের মানকে ক্ষুণ্ন করতে না পারে।’