রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আজ

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আজ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে সংকটের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিরাপত্তা পরিষদের কাছে তুলে ধরবেন জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। ৮ দেশের উদ্যোগে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
noname

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।  বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি আর ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স নিজস্ব অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে তুলে এনেছে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ভয়াবহ বাস্তবতা।  জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। এখনও বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে হাজারো রোহিঙ্গা। তারা দু’দেশের মধ্যবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ড তম্ব্রুতে অবস্থান করছে।

নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স এবং অস্থায়ী পাঁচ সদস্য সুইডেন, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, কাজাখস্তান ও গিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবে সাড়া দিয়েই আজকের বৈঠক। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এর আগেও নিরাপত্তা পরিষদে বেশ কয়েক দফা রুদ্ধদ্বার ও প্রকাশ্যে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায়নি।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অবশ্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) উত্থাপিত প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। তবে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবের নৈতিক প্রভাব থাকলেও আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন। চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতায় তা সম্ভব হচ্ছে না ।

আন্তর্জাতিকীকরণের পরিবর্তে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মধ্য দিয়ে সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া ও চীন। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করলেও বাংলাদেশ বারবার বলে আসছে, আন্তর্জাতিক চাপ সরে গেলে মিয়ানমার তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করবে। এ কারণে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সব ফোরামেই মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের এক আলোচনায় বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভেটো প্রদানে বিরত থাকার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একই সাথে রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাই-বাছাই ও প্রত্যাবাসনের সার্বিক প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআর-এর সম্পৃক্ততা চেয়েছে বাংলাদেশ।