সৌদি আরবে সেনা মোতায়েন নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে উত্তেজনা

সৌদি আরবে সেনা মোতায়েন নিয়ে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটকে বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে পাকিস্তান সরকার। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সিনেট অধিবেশনে দেশের ও সেনাদের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব তথ্য জানানো সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগীর। আর এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিনেট চেয়ারম্যান রাজা রাব্বানি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগীর ও প্রধানমন্ত্রী শাহীদ খাকান আব্বাসির বিরুদ্ধে সংসদ অবমাননার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ারও হুমকি দেন তিনি। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন খবরটি জানিয়েছে।

সৌদি আরবে সেনা মোতায়েন নিয়ে বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানায় পাকিস্তান সরকার
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া এবং সৌদি রাষ্ট্রদূত নাওয়াফ সাইদ আল মালিকি জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে বৈঠক করেন। জানানো হয়, ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনা করতে ওই বৈঠক করা হচ্ছে। বৈঠকের পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘পাকিস্তান-সৌদি আরবের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতার ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি সেনাদের একটি বহরকে সৌদি আরবে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান মিশনে পাঠানো হচ্ছে।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খুররম দস্তগীর খানকে সিনেটে তলব করা হয়। তিনি তখন বলেন, সৌদি আরবে সেনা মোতায়েন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানানো যাবে না। তবে নতুন করে কত সেনা পাঠানো হচ্ছে তা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেন তিনি। জানান, ১৬০০ সেনা আগে থেকে মোতায়েন আছে এবং নতুন করে ১০০০ সেনা পাঠানো হচ্ছে। সিনেট চেয়ারম্যান রাজা রাব্বানি তখন জানতে চান, সৌদি আরবে ১,৬০০ সেনা মোতায়েন থাকার পরও কেন নতুন করে ১,০০০ সেনা পাঠানো হচ্ছে এবং এসব সেনা কী সৌদি আরবের ভেতরেই মোতায়েন করা হবে? জবাবে খুররম দস্তগীর আবারও বলেন, ‘সব কথা বলা যাবে না।’ তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহীদ খাকান আব্বাসির অনুমোদনে সৌদি আরবে সেনা পাঠানো হচ্ছে। এ সময় রাজা রাব্বানি বলেন, গত কয়েক মাস ধরে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানার পরও তা গোপন রেখে সংসদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় কেন আপনাদের বিরুদ্ধে সংসদ অবমাননার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?

সিনেটর ফরহাতুল্লাহ বাবর বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ইয়েমেন সীমান্তের কাছে পাকিস্তানি সেনাদের মোতায়েন করা হবে। আপনি পরিষ্কার করুন, আসলে সেনাদের কোথায় মোতায়েন করা হবে?’

রাজা রাব্বানি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে তথ্য গোপন না করার আহ্বান জানান। প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘আপনি আমাদের ললিপপ দেবেন না; আমরা কেউ শিশু নই।’ তারপরও এ ব্যাপারে বলতে অস্বীকৃতি জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সেনাদের সৌদি আরবের বাইরে কোথাও মোতায়েন করা হবে না বলেও আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন তিনি। তবে খুররমের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেন সিনেট চেয়ারম্যান।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ইয়েমেনে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানি সেনা মোতায়েন চাইছে সৌদি আরব। তবে সৌদি আরবের সে চাহিদা এড়াতে পাকিস্তানকে বেগ পেতে হয়েছে। ইয়েমেন সংঘাতে দেশের ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান উল্লেখ করে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাবও পাস হয়। গত বছর অবসরপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়।