ছয় মাসে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬ লাখ ৮৮ হাজার

গত বছর আগস্টে রাখাইন সহিংসতা জোরালো হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা জানায়, বিশ্বের বৃহত্তম এই শরণার্থী শিবিরে যেকোনও সময় মহামারি আকারে রোগ ছড়িয়ে পড়বে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। টেকনাফ সীমান্তে ঢল নামে মানুষের। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নতুন পরিসংখ্যান হাজির করা হয়।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন।আগের মতো রোহিঙ্গা স্রোত না থাকলেও এখন অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়নি।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স জানায়, এখনও প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশে শতাধিক রোহিঙ্গা আসছে। সংস্থাটির জরুরি ব্যবস্থা বিষয়ক সমন্বয়ক কেট নোলার বলেন, আগের মতো এত বিশাল আকারে রোহিঙ্গা ঢল না হলেও এখনও প্রতি সপ্তাহেই রোহিঙ্গারা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তারা রাখাইনে নিজেদের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করেন না। তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। 

শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় অধিবাসীরাও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কক্সবাজারে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও সহযোগী সংস্থাগুলো কলেরাসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিয়েছে।             

তবে এখনও অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দিন দিন চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। ’

পুনম ক্ষেত্রপাল বলেন, ‘পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, আশ্রয় ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণেই পানিবাহিত রোগগুলো ছড়িয়ে পড়ছে।’

বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়ত এই জনগোষ্ঠী ২০১২ সালের পর থেকে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ৯ হাজার রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস।