বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশের নেপথ্যে পাকিস্তান ও চীন: ভারতীয় সেনাপ্রধান

দিল্লির সঙ্গে চলমান ‘ছায়াযুদ্ধে’র অংশ হিসেবে ইসলামাবাদ ‘পরিকল্পিতভাবে’ ভারতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী পাঠাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। তার দাবি, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অস্থির রাখতে চীনের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ওই এলাকার দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তান। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিপিন রাওয়াত এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই।

বিপিন রাওয়াত
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ টেনে জেনারেল রাওয়াত বলেন, ‘আমাদের পশ্চিমা প্রতিবেশীর (পাকিস্তান) কারণে পরিকল্পিতভাবে অবৈধ অভিবাসন চলছে। তারা সবসময় এই এলাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং সেটা নিশ্চিত করতে চাইবে। বিভিন্ন মাত্রায় ছায়াযুদ্ধ চালাতে চায় তারা।’ এর পেছনে চীনের মদত রয়েছে ইঙ্গিত করে রাওয়াত আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের (চীন) সমর্থন নিয়ে পশ্চিমা প্রতিবেশী এই ছায়াযুদ্ধের খেলাটা ভালোই খেলে। এ এলাকাকে অস্থির রাখতে চায় তারা। এভাবে অনুপ্রবেশ ঘটতেই থাকবে। এর সমাধান হলো সমস্যা শনাক্ত করা ও সামগ্রিকভাবে তা পর্যবেক্ষণ করা।’ সেনাপ্রধান অবশ্য একইসঙ্গে এও বলেন, বাংলাদেশে বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে জমি কমছে ও সংকুচিত হচ্ছে এবং সেটাও অনুপ্রবেশের আরেকটি কারণ।

আসামের একাধিক জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে বলে সম্প্রতি প্রকাশিত বেশ কিছু রিপোর্টের উল্লেখ করে রাজ্যটিতে বদরুদ্দিন ওমরের অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফোরামের (এআইইউডিএফ) প্রভাব বাড়ার কথা জানান বিপিন রাওয়াত। ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আসামে ১৯৮৪ সালে মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এআইইউডিএফ বলে একটা দল আছে। খেয়াল করে দেখুন, বিজেপি বছরের পর বছর যে গতিতে বেড়েছে, ওরা আসামে তার চেয়েও দ্রুত বেড়েছে।’

প্রসঙ্গত, মুসলিম স্বার্থরক্ষার দাবি করে ২০০৫ সালে গঠিত হওয়া দলটি থেকে বর্তমানে তিনজন লোকসভা সদস্য ও ১৩ জন বিধায়ক রয়েছেন। আসামে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, এমন জেলার সংখ্যা পাঁচ থেকে বেড়ে ৯ হয়েছে। এই তথ্য উল্লেখ করে ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, ‘ওখানকার জনবিন্যাস এখন আর বদল করা সম্ভব বলে মনে করি না। পাঁচ থেকে বেড়ে আট বা ৯টি জেলায় এমন হলে সরকারে যে-ই থাকুক, বিপর্যয় কিন্তু ঘটেছে।’

ভারতীয় সেনাপ্রধান বলেন, সরকার উত্তর-পূর্বের ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে, উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফলে ওই অঞ্চলকে মূল স্রোতে শামিল করে উন্নয়ন ঘটাতে বেশি দেরি হবে না। উন্নয়ন সম্ভব হলেই ওখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে পাওয়া যাবে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি গত বছর আসামে সরকার গঠন করে। অনুপ্রবেশকারীরা স্থানীয় হিন্দুদের কর্মসংস্থান নষ্ট করছে দাবি করে ‘অবৈধ’ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শপথের কথা জানায় দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি একটি আদমশুমারি চালানো হয়। ৩১ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার প্রথম খসড়া প্রকাশ করে আসামের রাজ্য সরকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময় থেকে ২০ লাখেরও বেশি মুসলিম ভারতের আসাম রাজ্যে গেছেন। বিজেপি সরকারের অধীনে ভারতীয় নাগরিক স্বীকৃতি পেতে তাদের ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে সেখানে বসবাসের পারিবারিক প্রমাণপত্র দিতে হবে। তবে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মুসলিমদের কেউ কেউ বলছেন, তাদের পূর্বসূরিরা এসব প্রমাণ বা নথি সংরক্ষণ করার গুরুত্ব বুঝতে পারেননি। ফলে নাগরিক প্রমাণের মতো যথেষ্ট কাগজপত্র নেই অনেকেরই। তাই জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) তালিকার আওতায় 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি' হিসেবে চিহ্নিত করে অনেক মুসলিমকে বের করে দেওয়ার আশঙ্কা করা হয়। তবে ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল সাইলেশ তালিকার খসড়া প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘যাদের এখন পর্যন্ত যাচাই করা হয়েছে, তাদের নিয়ে এই খণ্ডিত খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বাকিদের নাম বিভিন্নভাবে যাচাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলেই আমরা আরেকটি খসড়া প্রকাশ করব।’