মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ঘটনায় দেশটির জেনারেলদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২৬ ডিসেম্বর সোমবার ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে পারেন। কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স। 

দুইজন ইউরোপীয় কূটনীতিক রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি সোমবার সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা তালিকায় থাকা বার্মিজ জেনারেলদের নামের তালিকা ঘোষণা করতে পারেন।

মিয়ানমারের ওপর ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এখন একই পথে হাঁটছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউ-এর নিষেধাজ্ঞায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের মতো সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসলে সেটা হবে এ ইস্যুতে ইউরোপের সবচেয়ে কঠিন পদক্ষেপ।

একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মন্ত্রীরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন সদস্যদের ব্যাপারে অনতিবিলম্বে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা প্রস্তাবের জন্য মোঘেরিনির প্রতি আহ্বান জানাবেন।

এছাড়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদ্যমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করতে মোঘেরিনির প্রতি আহ্বান জানাবেন ইইউভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

সোমবার ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়মিত বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মিয়ামারে আটককৃত রয়টার্সের সংবাদিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারেও আহ্বান জানানো হতে পারে।

মিয়ানমারের মংডু`তে পুড়িয়ে দেওয়া একটি রোহিঙ্গা গ্রাম। ছবি: রয়টার্স।

এর আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর শেষে এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায় ইইউ পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধি দল। এ মাসে দেওয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাস্তবতায় রোহিঙ্গারা গণহারে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এমতাবস্থায় পরিস্থিতির উন্নয়নে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) জোরালো অংশগ্রহণ নিশ্চিতেরও আহ্বান জানিয়েছে ইইউ প্রতিনিধি দল। একইসঙ্গে তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার ঘটনায় স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে ২০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত আগস্টে রাখাইন সহিংসতা জোরালো হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় খুন-ধর্ষণ থেকে থেকে বাঁচতে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এই বাস্তবতায় মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নতুন পরিসংখ্যান হাজির করা হয়।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স জানিয়েছে, এখনও প্রতি সপ্তাহে বাংলাদেশে শতাধিক রোহিঙ্গা আসছে। সংস্থাটির জরুরি ব্যবস্থা বিষয়ক সমন্বয়ক কেট নোলার বলেন, আগের মতো বিশাল আকারে ঢল না নামলেও এখনও প্রতি সপ্তাহেই রোহিঙ্গারা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। তারা রাখাইনে নিজেদের বাড়িতে নিরাপদ বোধ করেন না। সেখানে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।

শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় অধিবাসীরাও স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কক্সবাজারে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও সহযোগী সংস্থাগুলো কলেরাসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে দিন দিন চ্যালেঞ্জ বাড়ছে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোর সহায়তা প্রয়োজন।