বুলডোজার চালিয়ে রোহিঙ্গা নিধনের আলামত নিশ্চিহ্ন করছে মিয়ানমার: এইচআরডব্লিউ

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের অর্ধ শতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। শুক্রবার মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তারা বলছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞ আড়াল করতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে। এইচআরডব্লিউ-এর পক্ষ থেকে অপরাধের আলামতের সুরক্ষায় অবিলম্বে বুলডোজারের ব্যবহার বন্ধের তাগিদ দেওয়া হয়েছে মিয়ানমারকে। ‘দ্যা আরাকান প্রজেক্ট’ নামে সে দেশের স্থানীয় একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা ক’দিন আগে একই অভিযোগ তুলেছিল।
বুলডোজার ব্যবহারের আগের/পরের ছবি


গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। এই অবস্থাতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে আলামত নষ্টের অভিযোগ প্রকাশ্যে এলো।

মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ধ্বংসযজ্ঞের নতুন স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করে জানানো হয়, ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে জনশূন্য ৫৫টি গ্রামের সব স্থাপনা ও ফসলাদি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এই গ্রামগুলোর মধ্যে অন্তত ২ টি পূর্বে অক্ষত ছিল বলেও দাবি করা হয় এতে। এছাড়া গত বছরের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সাড়ে ৩শ'রও বেশি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার কথাও জানানো হয়। বলা হয়, বুলডোজারে গ্রাম গুড়িয়ে দেওয়ার ফলে একইসঙ্গে অপরাধকর্মের স্মৃতি ও আইনি আলামত ধ্বংস হয়ে যাবে।

এইচআরডব্লিউ-এর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, গুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এগুলো সংরক্ষণ করা খুবই জরুরি। তিনি বলেন, ‘সংরক্ষিত আলামত জাতিসংঘের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞদেরকে সেই সময়ের অপরাধকর্মগুলো যথাযথভাবে নথিবদ্ধ করার জন্য অপরিহার্য। এর মধ্য দিয়েই কেবল দোষীদের চিহ্নিত করা সম্ভব।’ এভাবে অপরাধের আলামত ধ্বংসের প্রচেষ্টাকে ন্যায় বিচারের পথে বাধা আখ্যা দেন তিনি।

 ‘দ্যা আরাকান প্রজেক্ট’ নামে সেদেশের স্থানীয় একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা কদিন আগে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিল। গার্ডিয়ানের খবরে ওই সংস্থাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, গত বছর সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত রোহিঙ্গা গণহত্যার স্থানগুলোতে বুলডোজার চালিয়ে গণহত্যার প্রমাণ ধ্বংস করার চেষ্টা করছে মিয়ানমার সরকার,। বুলডোজারে ধ্বংসের আগেই রাখাইনের গণকবরের একটি ভিডিও ধারণ করেছিল। তা পরে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেয় তারা। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, জঙ্গলের মাটিতে ব্যাগ থেকে অর্ধগলিত একটি পা বেরিয়ে এসেছে।


 মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্যা আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লিওয়া গার্ডিয়ানকে সে সময় জানান, গণকবরের আলামত স্থায়ীভাবে ধ্বংসের জন্য বুলডোজার ব্যবহার করছে মিয়ানমার সরকার।ক্রিস লিওয়া আরও জানান, আলামত ধ্বংসের কাজে নিয়োজিতরা এসব বুলডোজার রাখাইন থেকে আনছে না, বুলডোজারগুলো আসছে সেন্ট্রাল মিয়ানমার থেকে। এতে স্পষ্ট হওয়া যায় যে মিয়ানমার সরকারের আদেশেই এসব ঘটছে।’