আলোচনায় আগ্রহী উ. কোরিয়া, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের শর্ত যুক্তরাষ্ট্রের

দক্ষিণ কোরিয়া সফরে থাকা উত্তর কোরীয় দূত কিম ইয়ং চোল বলেছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী। রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন-জায়ে ইন এর সঙ্গে বৈঠকের সময় এমন আগ্রহের কতা প্রকাশ করেন চোল। তবে মার্কিন প্রশাসন বলছে, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক তৎপরতা বন্ধের অঙ্গীকার করলেই কেবল তারা আলোচনায় যেতে রাজি আছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা খবরটি জানিয়েছে।

ট্রাম্প ও উন
দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত শীতকালীন অলিম্পিকের সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য উত্তর কোরিয়ার একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে। এই প্রতিনিধিদলে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা কূটনীতিকরাও রয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের সঙ্গে বৈঠক করেন উত্তর কোরীয় দূত কিম ইয়ং চোল। পরে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়, উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চান বলে জানিয়েছেন চোল। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে উত্তর কোরিয়া ‘ব্যাপক আগ্রহ’ প্রকাশ করেছে বলেও জানানো হয়।

এদিকে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে আলোচনায় বসার আগ্রহের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর একটি বিবৃতি দিয়েছে হোয়াইট হাউস। রবিবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই পিয়ংইয়ংয়ের আজকের আলোচনার প্রস্তাবের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কিনা। সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্ব উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির পরিসমাপ্তি দেখতে চায়।’

স্যান্ডার্স আরো বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যেকোনও আলোচনার শর্ত হলো দেশটিকে দেখাতে হবে যে তারা পরমাণু অস্ত্রমুক্ত হওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। 

জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী পরমাণু ও ব্যালাস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র উন্নয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে উ. কোরিয়া। তবে দক্ষিণে থাড নামে পরিচিত উচ্চ প্রযুক্তির মিসাইল প্রতিরোধ ব্যবস্থা মোতায়েন নিয়ে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে দেশটি। দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চতর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণার বিপরীতে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে উত্তর কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার বিপরীতে একে তারা যোগ্য জবাব বলে মনে করে। ২০০৮ সাল থেকেই উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালের নভেম্বরে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরেই জাতিসংঘ দেশটির বিরুদ্ধে একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যদিয়ে উত্তর কোরিয়ার পেট্রোল আমদানি ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সম্প্রতি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প বলেন,আজ আমি ঘোষণা দিচ্ছি উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আমরা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান,এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে ৫৬টি জাহাজ ও নৌ পরিবহন কোম্পানি।