অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিল পাস ফ্লোরিডার আইনপ্রণেতাদের

জাতীয় বন্দুক সংস্থার মতামত উপেক্ষা করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বিল পাস করলেন ফ্লোরিডার আইনপ্রণেতারা।  অস্ত্র কেনার সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৩ বছর বৃদ্ধিসহ বেশকিছু নিয়ন্ত্রণের বিধান রেখে বুধবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাস হয়। আগেই বিলটি রাজ্যের উচ্চকক্ষ (সিনেটে) পাস হয়েছে। এখন বিলটি পাঠানো হবে অঙ্গরাজ্যটির গভর্নরেরর কাছে। তিনি অনুমোদন দিলেই এটি আইনে রূপান্তরিত হবে। তিনি বিলটি স্বাক্ষর না করলেও ১৫ দিনের ব্যবধানে এটি আপনাআপনিই আইনে পরিণত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে গভর্নর বিলটিতে ভেটো দেওয়ারও ক্ষমতা রাখেন। সেক্ষেত্রে আইনটি কার্যকর হবে না। ফ্লোরিডার স্কুলে সাম্প্রতিক ভয়াবহ হামলার পর জনগণের প্রবল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মুখে আইনে এই ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা হতে যাচ্ছে।

_100324284_045398399১৪ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলের মারজোরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে বন্দুক হামলা চালানো হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গোলাগুলির পর হামলাকারী হিসেবে আটক করা হয় স্কুলটির সাবেক ছাত্র নিকোলাস ক্রুজকে। এ ঘটনায় নতুন করে সামনে আসে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুরনো বিতর্ক। মার্কিনিদের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের ওপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশা থাকলেও গান লবির দোসর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও কোনও কার্যকর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে দেশটির নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বৈধতা দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্র বিক্রির আগে তিনদিনের ওয়েটিং পিরিয়ড থাকবে। সিনেট থেকে পাশ হয়ে এখন রাজ্যের গভর্নরের কাছে যাবে।  ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিক্ষার্থী ও নিহতদের অভিভাবকদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাতের সময়ে শিক্ষকদের অস্ত্র রাখার প্রস্তাব রেখেছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টি দলীয়ভাবে নাগরিকদের অস্ত্র রাখার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এমন প্রেক্ষাপটে ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার নিজের দফতরে অস্ত্র আইন সংশোধনের পক্ষে-বিপক্ষে সোচ্চার থাকা ১৭ জন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। 

তখনই বোঝা যাচ্ছিলো নতুন কোনও আইন আসতে পারে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে। নতুন এই আইনে বয়স বাড়ানোসহ এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন।

কি থাকছে নতুন আইনে?

১. স্কুলগুলোতে সশস্ত্র সেচ্ছাসেবী বাহিনীর অনুমোদন থাকছে। পার্কল্যান্ডের গোলাগুলি নিহত হওয়া কোচ অ্যারন ফিসের নামানুসারে এই বাহিনীর নামকরণ করা হয়েছে। এতে করে জেলা কার্যালয়ের অনুমতি ও বিশেষ প্রশিক্ষণ সাপেক্ষে স্কুল কর্তৃপক্ষ অস্ত্র রাখতে পারবে।

২. নিরাপত্তা বাহিনীতে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকলে ক্লাসরুমের শিক্ষকরা অস্ত্রবহন করতে পারবে না। 

৩. বাম্প স্টক যেটা সেমি-অটোমেটিক অস্ত্রকে অটোমেটিক করতে সহায়তা করে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

৪. মানসিক চিকিৎসায় অর্থায়ন বাড়ানো হয়েছে। তাদের অস্ত্র না দিতেও আরও কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে।

তবে এআর-১৫ এর মতো অস্ত্রকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। অথচ এটাই পার্কল্যান্ডের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মূল দাবি ছিল। ফ্লোরিডায় আগে থেকেই তিনদিনের ‘ওয়েটিং পিরিয়ড’ কার্যকর ছিল। কিন্তু সেটা খুব বেশি বাস্তবায়ন হতো না। ১৮ বছরের একজনই কোনও অপেক্ষা ছাড়াই অস্ত্র কিনতে পারতেন।

সবাই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চাইছিলেন। বুধবার আট ঘণ্টা ধরে চলে ভোটগ্রহণ। শেষ পর্যন্ত ৬৭-৫০ ভোটে পাশ হয় আইনটি। এর আগে সোমবার সিনেটে পাশ হয়েছিল বিলটি।

কি বলছেন সংশ্লিষ্টরা?

বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত এক শিক্ষার্থীর বাবা রায়ান পেটি এই আইনের প্রশংসা করেছেন। এক ‍টুইটবার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানি ভবিষ্যতে যেন স্কুলে এমন সহিংসতা না হয় সেজন্য কাজ করছে সবাই। আর আজকের ভোট আমাদের প্রথম ধাপ।’

রাজ্যের ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতা বলেন, স্কুলের কর্মীদের অস্ত্র বহন করার সিদ্ধান্ত ভালো ছিল। আর ছয়টি রাজ্যে এমন অনুমোদন আছে।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবিতে কাজ করা কর্মীরা আশা করছেন, ফ্লোরিডার এই আইন তাদের লড়াইয়ে নতুন মোড় নিয়ে আসবে।

এখন কি হবে?

গভর্নর রিক স্কটকে এখন এই বিলে স্বাক্ষর করতে হবে। তখনই এটি আইনে রুপ নেবে। তবে স্কট এখনও কিছু বলেননি যে তিনি এর সমর্থন করবেন কি না। এর আগে তিনি বলেছিলেন যে শিক্ষকদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি এই ব্যাপারে আরেকটু সময় চাইছি। আমি বিলটি পরে আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবো।’ তবে তিনি ভেটো না দিলে ১৫ দিনের মধ্যে এমনিতেই এই আইন পাশ হয়ে যাবে।