পরিবর্তিত মার্কিন ড্রোন নীতিমালা নিয়ে ধোঁয়াশা, হতাহত বেড়েছে ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে’

সম্প্রতি মার্কিন ড্রোন নীতিতে পরিবর্তন আসার পর হতাহতের সংখ্যা ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ বেড়েছে। কয়েকটি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে উদ্ধৃত করে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা এই খবর জানিয়েছে। বিশ্বের কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি গ্রুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ও ড্রোন ব্যবহারে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এই পরিবর্তনের কথা স্বীকার করে না। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে ড্রোন ব্যবহারের পরিবর্তিত নীতিমালা স্পষ্টভাবে জনসম্মুখে হাজির করার তাগিদ দিয়েছে ওই মানবাধিকার গ্রুপটি।
noname

বিমান হামলা নিয়ে কাজ করা সংগঠন এয়ারওয়ারস জানায়, ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালে সিরিয়া ও ইরাকে ড্রোন হামলা ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আর বেসামরিক নিহত হয়েছেন ২১৫ শতাংশ বেশি। সোমালিয়ায় মার্কিন ড্রোন তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ২০১৭ সালে ড্রোন হামলায় সেখানে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ইয়েমেনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে চীনা বার্তা সংস্থা শিনহুয়া।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সেন্টার ফর কন্সটিটিউশনাল রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে মানবাধিকার গ্রুপটি। তাদের তরফ থেকে যৌথভাবে মার্কিন ড্রোননীতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘খবরে প্রকাশ পাওয়া নতুন নীতি ও  এর সঙ্গে মিলিত হয়ে এই মার্কিন প্রশাসন ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় নাটকীয়ভাবে প্রাণঘাতী অভিযানের সংখ্যা বাড়ানোয় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে বেআইনি হত্যা ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি বাড়ায়ও আমরা উদ্বিগ্ন।’

২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার পর প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র মনুষ্যবিহীন বিমান বা ড্রোন দিয়ে হামলার মাধ্যমে সন্দেহভাজন জঙ্গি হত্যা শুরু করে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় প্রিডেটর ও রিপার ড্রোন ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রকল্পের সম্প্রসারণ ঘটান বারাক ওবামা। তবে ওবামা গুপ্তচর সংস্থা সিআইএকে ড্রোন ব্যবহারের অনুমতি দেননি। এতে অন্য দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ড্রোন হামলা করতে পারে বলে মনে করতেন তিনি। গত বছর ডিসেম্বরে জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি ২০১৮-এ স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই আইনের মাধ্যমে মার্কিন সামরিক তহবিল এবং এর আওতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পূর্বের মার্কিন ড্রোন-নীতিতে আনা পরিবর্তনের বিষয়ে ১২ মার্চের মধ্যে কংগ্রেসকে অবহিত করার কথা রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ড্রোন-নীতিতে কোনও পরিবর্তনের কথা প্রকাশ্যে আনেনি এখনও। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কথিত ওই পরিবর্তনের আওতায় হামলার লক্ষ্যবস্তু থেকে ‘আসন্ন হুমকির আবশ্যিকতা’’ শিথিল করা হয়েছে। এর ফলে সশস্ত্র সংঘাত চলছে না, এমন অঞ্চলকেও লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার ব্যাপারে ‘প্রায় নিশ্চিত’ হওয়ার বিষয়টি থাকবে ঠিকই, তবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে সেই পরিস্থিতি বিশ্লেষণের কর্তৃত্ব থাকবে সিআই’র হাতে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিভিলিয়ান্স ইন কনফ্লিক্ট সেন্টারের পরিচালক ড্যানিয়েল মাহান্তি বলেন, নতুন এই পরিবর্তনগুলো সরকার জনসমক্ষে আনতে চান না। তবে বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ, যাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নির্ভর করে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। এছাড়া এই আইন শিথিলকরণে আরও বেসামরিক প্রাণ হারাতে পারেন বলে মনে করেন মাহান্তি।