ত্রিপুরায় মুখ্যমন্ত্রীর শপথ নিলেন বিজেপি নেতা বিপ্লব দেব

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন বিজেপি নেতা বিপ্লব কুমার দেব। ৩ মার্চ ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ত্রিপুরা দখল করে বিজেপি। বিপ্লব দেব প্রথম বিজেপি নেতা, যিনি ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রিত্বের ভার নিয়েছেন। আগরতলায় আসাম রাইফেলসের মাঠে শপথ অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। ভারতের স্থানীয় সময় শুক্রবার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে তিনি শপথ নেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিপ্লব দেবের জন্ম চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার সহদেবপুর পূর্ব ইউনিয়নের মেঘদাইর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরায় চলে যায় তার পরিবার।


ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব

শুক্রবার নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণ ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ  শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিজেপির সব মুখ্যমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। লালকৃষ্ণ আদভানি থেকে শুরু করে রাজনাথ সিং, মুরলী মনোহর জোশী, বিজয় রূপানিও মঞ্চে উপস্থিত থেকে নতুন মুহূর্তের সাক্ষী হন। নবনির্বাচিত বিজেপি বিধায়করাও আসেন শপথ অনুষ্ঠানে। শপথের আগে নিজে গিয়ে বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা বিজেপির ভাবী মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। আমন্ত্রণ গ্রহণ করে অনুষ্ঠানে হাজির হন তিনিও। শুক্রবার বিপ্লব দেবের পাশাপাশি উপ-মুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা এবং রাজ্য সরকারের অন্য মন্ত্রীরাও শপথগ্রহণ করেন। নতুন মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল তথাগত রায়। 

কেন্দ্রীয় সরকার নতুন ত্রিপুরা সরকারকে সহযোগিতা করে যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ত্রিপুরার স্বপ্ন, আমাদেরই স্বপ্ন।’ মোদি জানান, ত্রিপুরার উন্নয়নে নতুন সরকার প্রত্যেক রাজ্যবাসী ও সমাজের প্রতিটি শ্রেণিকে একসঙ্গে নিয়ে চলবে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হবে উন্নয়ন, সুশাসন, জনতার অংশগ্রহণ এবং ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’। মোদি যোগ করেন, ’আমি প্রধামনন্ত্রী হিসেবে উত্তর-পূর্বে একাধিকবার সফরে এসেছি। এটুকু বলতে চাই, উত্তর-পূর্বের সমস্যা বোঝে ভারতবাসী এবং প্রত্যেক দেশবাসী উত্তর-পূর্বের পাশে থাকবে।’

রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের মাঝে 'বিগ বি' বলেই পরিচিত বিপ্লব দেব। মিতভাষি বিপ্লব আগরতলার একটি ছোট ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন। স্ত্রী নীতি দেব কর্মসূত্রে দিল্লিতে থাকেন। দেব দম্পতির দুই সন্তান। ছেলে এবার দশম শ্রেণির পরীক্ষা দিচ্ছে। মেয়ে ছোট। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরা চলে যায় বিপ্লবের পরিবার। হিরুধন দেব ও মিনা রানি দেবের একমাত্র ছেলে তিনি। এরপর সেখানেই স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান তিনি। তবে তার আত্মীয়স্বজন অনেকেই এখনও রয়েছেন বাংলাদেশে।

জি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ত্রিপুরায় ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ঐতিহাসিক রায়ে জয় পেয়েছে দল। অথচ, সেই জয়ের অন্যতম কারিগর বিপ্লব মাত্রাতিরিক্ত উল্লাসে রাজি নন। তিনি বলেন, ''রাজ্যের মানুষই আমার শক্তি। যারা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন তাদের থেকেই শিক্ষা পাই।'' 

বিপ্লব বলেন, ‘বামপন্থীরা ত্রিপুরায় অনেক কিছু করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তারা তা কাজে লাগাতে পারেননি। রাজ্যের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে এখানে উন্নয়ন করা যায় তা এবার বিজেপি দেখাবে। ত্রিপুরার মানুষ তাদের রায় দিয়েছেন, এবার কাজ করার পালা আমাদের।’