জীবিতদের পরিচয় শনাক্তেও হিমশিম খাচ্ছে নেপাল

ইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারানো ৫১ আরোহীর মধ্যে এ পর্যন্ত পরিচয় শনাক্ত করা গেছে মাত্র আট জনের। ৩০ টি মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, কেবল মৃতদের নয়; জীবিত ২০ জনের সবার পরিচয় শনাক্তেও হিমশিম খেতে হচ্ছে নেপালকে। প্রকৃত সংখ্যা জানা না গেলেও সেই জীবিতদের বেশ কয়েকজনকে চেনা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে নেপাল কর্তৃপক্ষ। সবার পরিচয় শনাক্তে প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছে তারা। নিজস্ব ল্যাবে নিহত বাংলাদেশিদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। নমুনা সংগ্রহে এরইমধ্যে নেপালে গেছেন সিআইডির দুই সদস্য।
noname

গত সোমবার ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায় বিমানটি। অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয় এটি। দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত হন। ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট প্রধান ড. প্রমোদ শ্রেষ্ঠ জানিয়েছেন, এদের মধ্যে ৩০ জনের ময়নাতদন্ত শেষে মাত্র আটজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এদিকে পুলিশের মুখপাত্র মনোহ নিউপানে এএফপিকে জানান, জীবিত ও মৃত উভয়ের ক্ষেত্রেই আরোহীদের শরীরের বড় অংশ পুড়ে গেছে। এতে তাদের চেনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। জীবিতদের মধ্যে কমবেশি ‌১১ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছেন মনোজ। তবে এই সংখ্যার যথার্থতা নিয়ে তিনি নিজেও সংশয়ী।

নেপাল কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানিয়েছে, জীবিত ২০ জনের (এএফপির প্রতিবেদনে ২২ জন উল্লেখ করা আছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরে জীবিতদের মধ্যে আরও দুইজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে মিয়ানমার) শারীরিক ও মানসিক পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় তাদের অনেককে চিনতে পারছে না নেপাল। নতুন করে ২ জনের প্রাণহানীর খবর দেওয়ার আগে পুলিশের মুখপাত্র মনোজ জানান, জীবিত ২২ জনের (প্রকৃত সংখ্যা ২০) দুই নেপালি চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছেন। এখনও চিকিৎসাধীন ১৯ জন (প্রকৃত সংখ্যা ১৭)। একজন সিঙ্গাপুরে গেছেন চিকিৎসা নিতে।

ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক কর্তৃপক্ষের পক্ষে চিকিৎসক প্রমোদ শ্রেষ্ঠ বলেন, ‘আমরা মাত্র আটজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকি মরদেহ ঝলসে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।’ তবে এখনও তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।  চিকিৎসকরা তাদের আঙুল, কানের দুল, অলঙ্কার কিংবা চোয়ালের আকৃতির মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা করবেন। ডা. প্রমোদ বলেন, ‘যদি কোনোভাবেই আমরা শনাক্ত করতে না পারি তবে ডিএনএ পরীক্ষা করবো।’

বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে সিআইডি’র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) শারমিন জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নেপালে ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিয়িক এসিড) পরীক্ষা করা হবে। নমুনা সংগ্রহ করতে এরই মধ্যে সিআইডি’র দুই বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা নেপালে গেছেন। এছাড়া নিহতদের স্বজনদেরও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুস সালাম ও সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট আশরাফুল আলম বুধবার (১৪ মার্চ) নেপালে গেছেন। তারা মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসবেন। এরপর সেগুলোর পরীক্ষা আমাদের ল্যাবে হবে।’